শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের জিম্মিদশার খবর শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা-বাবা

জলদস্যুদের কবলে জাহাজ

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের মধ্যে রয়েছেন নওগাঁর এএসএম সাইদুজ্জামান সাঈদ। তিনি নওগাঁ শহরের আরজী নওগাঁ- শাহী মসজিদ ফিশারি গেট এলাকার আবদুল কায়েমের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকাল ৩টার দিকে সাইদুজ্জামান সাঈদের পরিবার জানতে পারেন ছেলে যে জাহাজে রয়েছে সেটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। পরে জাহাজটি জিম্মি করে জলদস্যুরা সোমালিয়ায় তাদের সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। এমন খবর শোনার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সাঈদের মা-বাবা। ছেলেকে ফেরত পেতে সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

বুধবার (১৩ মার্চ) বিকালে শহরের বাড়িতে গিয়ে সাইদুজ্জামান সাঈদের মা-বাবাকে ছেলের জন্য আর্তনাদ করতে দেখা যায়।

এ সময় বাবা অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর আবদুল কায়েম বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে জানতে পারি ছেলে যে জাহাজে রয়েছে সেটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। তবে তাদের কোনও সমস্যা হয়নি। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তারা দিচ্ছে। এরপর রাত ১০টায় আমার ছেলের বউয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ছেলের। তখন ঘরে বন্দি করে রাখার কথা জানান। জাহাজটি তাদের জিম্মায় নিয়েছে, তাদের (বাংলাদেশি নাবিক) কিছু করতে দিচ্ছে না বলে জানান। এ খবর পাওয়ার পর থেকে সারা রাত পরিবারের কেউ ঘুমাতে পারেনি। সারা রাত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি ছেলের জন্য। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি।’

মা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘এখন আল্লাহর ওপর ভরসা রাখছি আমরা। আল্লাহ যেন সুস্থভাবে আমার ছেলেসহ জাহাজের সবাইকে সবার মায়ের বুকে ভালোভাবে ফিরিয়ে দেয়। এ ছাড়াও আমরা প্রধানমন্ত্রী ও কোম্পানির কাছে অনুরোধ জানাবো তারা যেন খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়। মা হিসেবে এটাই আশা।’ এ সময় দেশবাসীর কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান তিনি।

সাঈদের স্ত্রী মান্না তাহরিন বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সর্বশেষ তার (সাঈদ) সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তিনি জানান, তারা সবাই ভালো আছেন। ইফতার করছেন এবং সবাইকে এক রুমে রাখা হয়েছে। এরপর বুধবার (১৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাহাজের আরেকজন আমাকে ভয়েস মেসেজ দিয়ে রেখে দেন, সবাই ভালো আছেন। সেহরি খেয়ে সবাই এক রুমেই ঘুমাচ্ছেন। তবে মুক্তিপণ যত তাড়াতাড়ি দেওয়া হবে তত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে। মুক্তিপণ দেওয়া না হলে একে একে সবাইকে মেরে ফেলা হবে। এটা শোনার পর আরও বেশি চিন্তায় আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এক বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। বাচ্চাটা অনেক ছোট, এখনো বুঝতে শিখেনি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে একটাই আবেদন, আমার স্বামীসহ জাহাজের সবাইকে সুষ্ঠুভাবে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারেন গ্রুপের কমকর্তারা।

এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জলদস্যুদের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জাহাজের নাবিকেরা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জলদস্যুরা নাবিকদের কোনও ক্ষতি করেনি। তাদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জলদস্যুদের মুক্তিপণ দাবির বিষয়টিকেও তিনি গুজব দাবি করে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনও দাবি-দাওয়া জানায়নি জলদস্যুরা। হয়তো জাহাজটিকে তাদের সেফ জোনে নেওয়ার পর তখন তারা তাদের দাবির বিষয়টি বলতে পারে।’ বাংলা ট্রিবিউন

আরো পড়ুন ...