শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে দৈনিক সংবাদের প্রধান শিরোনাম, “বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ চৌদ্দ বছরে“।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে ৮২টি বেসরকারি এবং ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ মোট এক লাখ চার হাজার ৯২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
যেহেতু বিদ্যুৎ বিক্রি করেই কেন্দ্রগুলো লাভ করে তাই উৎপাদন বন্ধ রাখলেও তাদের একটি চার্জ (টাকা) পিডিবিকে দিতে হয়, যা চুক্তির সময় নির্ধারণ করা থাকে। বসিয়ে রেখে দেয়া এই চার্জই হলো ক্যাপাসিটি চার্জ।
পিডিবি’র দাবি, প্রতিষ্ঠানটি হিসেব করে যখন দেখে ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া অধিক সাশ্রয়ী তখনই ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়।
একই বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান শিরোনাম, “Burden of capacity charges heavier than thought” অর্থাৎ “ক্যাপাসিটির বোঝা চিন্তার চাইতেও ভারী”। প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদাহরণ টেনে নেয়া হয় যেগুলো গত কয়েক বছরে এক ওয়াট বিদ্যুতও উৎপাদন করেনি।
কিংবা খুবই নগন্য পরিমাণ উৎপাদন করেছে। তবুও এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য “ফিক্সড কস্ট” হিসাবে শত কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে।
গত বছরের হিসাবে, দেশে কমপক্ষে ১৫১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল – এরমধ্যে ৬৩টি সরকারি এবং ৮৮টি বেসরকারি।
এরমধ্যে ডেইলি স্টার ৪২টি সরকারি ও ২৬টি বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৬৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হিসাব দেয়।
সে হিসেবে পাঁচ অর্থবছরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ২৯,১৪৬ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে অবিলম্বে কম দক্ষতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি বন্ধ করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে নিউ এইজের প্রধান শিরোনাম, “Prices of essentials rise by 34-219pc in 3 years” যার অর্থ, “তিন বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ৩৪-২১৯ শতাংশ বেড়েছে”।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আটা, ভোজ্যতেল, লাল মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি ও ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত তিন বছরে ৩৮ থেকে ২১৯ শতাংশ বেড়েছে, যার ফলে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী খাদ্যের মূল্য সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে খাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা এর পেছনে মূল্যস্ফীতি রোধে সরকারি তদারকির অনুপস্থিতি, এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করেছেন।
আয়ের প্রবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির নিচে থাকায় গত কয়েক বছর ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের স্থির আয়ের মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৯ শতাংশ এবং মজুরি বৃদ্ধির হার ৭.৫২ শতাংশ।
একই বিষয়ে সমকালের প্রধান শিরোনাম, “রেকর্ড উৎপাদনেও আলুর রেকর্ড দাম”। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দেশে এবার রেকর্ড ভেঙেছে আলুর উৎপাদন। হিমাগারেও আছে ভরপুর মজুত। তবু বাজারে রেকর্ড দরে বেচাকেনা হচ্ছে আলু।
এরপরও ঢাকার পাড়া-মহল্লায় এক কেজি আলু কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। যা গত মাসেও ছিল ৩২ টাকা কেজি।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেশের হিমাগারে কত আলু মজুত আছে, সে তথ্য সংগ্রহে নেমেছে।
আলুর দাম বাড়ানোর পেছনে মধ্যস্বত্বভোগী ও হিমাগারের মালিকদের হাত রয়েছে বলে মনে করেন ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা। কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজির দাম হতে পারে ১৫ টাকার মতো, যা খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৩২ টাকা হতে পারে। অথচ হিমাগার থেকে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকায়, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
তবে হিমাগারে মজুত আলু ও উৎপাদনের তথ্য যাচাই করলেই দাম এক সপ্তাহের মধ্যে নাগালে চলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বছরে আলুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ টন। তবে এ মৌসুমে ফলন আগের বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২২ লাখ টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া ৩৬৫ হিমাগারে প্রায় ২৫ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিবিসি বাংলা