রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
ব ই আ লো চ না
ড. তারেক ফজল: জাপানিদের ‘ইংলিশ পিরিতের’ কথা বলছিলেন তিনি। তিনি মানে রম্যলেখক ডাক্তার আবদুল্লাহ খান। আর কথিত ‘ইংলিশ পিরিত’ আদতে ‘আমেরিকা পিরিত’। লেখকের ভাষায়- ‘জাপানি যুবকদের জিজ্ঞেস করলে কেউ কেউ বলেন তাদের ধর্ম আমেরিকা।’ (পৃষ্ঠা-১০৪)
সেই জাপানিরা ইংলিশ জানা মানুষদের বড়ই কদর করে। লেখক আবদুল্লাহ খানও ‘দাঁতের ডাক্তারির’ প্রশিক্ষণ নিতে জাপানে গিয়ে সেই ‘কদরের সোয়াদ’ পেয়েছিলেন। ‘ইংলিশ শিখানোর’ খণ্ডকালীন মাস্টারি করেছেন। সেই স্মৃতি পাঠকদের জানাতে গিয়ে লিখেছেন ‘আমার লুলা-খোঁড়া ইংরেজির ওপর আমারই ভরসা হয় না। (পৃষ্ঠা-১০৫)
বলেছেন- ‘হাউ আর ইউ’ বলতে ‘হু আর ইউ’-এর উত্তর দিলেও কাফি।’
‘এই সুবাদে চালু’ এক ‘রটনা’ অথবা ‘ঘটনা’ জানিয়েছেন তিনি। রটনাটা (অথবা ঘটনাটা) এমন- মেহমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে বিমানের সিঁড়ির গোড়ায় স্বাগত জানাতে যাওয়া জাপানি প্রধানমন্ত্রী ‘বহু কষ্টে রপ্ত করা’ ইংলিশ গুলিয়ে ফেলে বলছেন- ‘হু আর ইউ?’ রসিকজন মি. ক্লিনটন জবাব দিচ্ছেন, যার বাংলা করলে দাঁড়ায়- ‘আমি ক্লিনটন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও বিবি হিলারির সোয়ামি।’ মুখস্থ করা ইংলিশে জাপানি প্রধানমন্ত্রী জবাব দেন- থ্যাংকু মি. প্রেসিডেন্ট। মি টুওওও!
‘রসের ভাণ্ড’ ডাক্তার আবদুল্লাহ খানের আরো বেশ কিছু রসের স্মৃতি আছে এ বইটিতে।
জাপানি ‘সাকুরা’ বইটির নামের শুরুতেই থাকলেও ইরানি ‘গুলে লালা’-এর বিবরণই পাঠক বইটিতে আগে পাবেন। শব্দের ‘কারিকুরি’ আর উইট-হিউমারের মিশেলে ডাক্তার খান নানান স্মৃতির বর্ণনায় পাঠককে গভীর মোহে আটকে রাখতে পারছেন। এই ধারার রম্য উপস্থাপনায় বাঙালি পাঠকরা সৈয়দ মুজতবা আলীকে স্মরণে রাখেন।
‘গুলে লালা’-এর ‘গোলাবি’ পাঠে লেখক একটি ‘ভারী বস্তু’ পাঠককে উপহার দিয়েছেন। ইরানের ইসলামী বিপ্লব যেই আলোকিত মেধা ও পাণ্ডিত্যের পাটাতনে দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম স্তম্ভ ড. আলী শরীয়তীর একটি লেখার (মূলত একটি প্রভাষণ) অনুবাদ করেছিলেন লেখক। এখানে সেটি সঙ্কলিত হয়েছে ‘আগামী দিনের ইতিহাস’ শিরোনামে।
হাতে নিলে বইটি পাঠককে টেনে নেবে এবং শেষ নাগাদ, সহজেই। ডাক্তার আবদুল্লাহ খানের লেখক সত্তা দীর্ঘজীবী হোক।
সাকুরা থেকে গুলে লালা
আবদুল্লাহ খান
মেরিট ফেয়ার প্রকাশন
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩
মূল্য : ৩৭০ টাকা, পৃষ্ঠা-১৬০
সংগ্রহের জন্য : ০১৯০২-৮৯১৪৪৪