বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের অনেক বড় একটা অংশ মফস্বল শহর এবং গ্রাম থেকে আসা। একমাত্র ঢাকার স্থানীয় শিক্ষার্থীরা ছাড়া সবাই পরিবার থেকে দূরে থাকেন। ফলে চাইলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে সাহরি কিংবা ইফতারের সুযোগ মেলে না। তবে এই শূন্যতা পূরণ হয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাহরি ও ইফতারের মধ্য দিয়ে। রমজান মাস এলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীসহ অনেককে দেখা যায় একসাথে ইফতার করতে এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের মধ্যে জগন্নাথ হল ছাড়া বাকি সব হলেই থাকেন মুসলিম শিক্ষার্থীরা। তবে মেয়েদের হলগুলোতে সব ধর্মের শিক্ষার্থীই থাকেন। রোজার মাসে এসব হলে অন্যরকম আমেজ লক্ষ করা যায়। যে যার মতো সাহরি সারলেও ইফতারে সেই আমেজ চোখে পড়ে। পরিবার থেকে দূরে থাকায় হলগুলোই শিক্ষার্থীদের কাছে দ্বিতীয় আবাস।
ক্যাম্পাসের অনেকগুলো পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, ইফতার কেন্দ্র করে প্রতিদিন আসরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের মাঠে সম্মিলিত হন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও মল চত্বর, সবুজ চত্বর, কার্জন হল, টিএসসিতে ইফতারির সময় জায়গা রাখা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করতে দেখা যায়। জায়গা ধরার পর কেউ জায়গায় বসে থাকেন, কেউ ইফতারি কিনে আনেন।
খোলা মাঠে বসে শিক্ষার্থীদের নিজেদের ইফতার ছাড়াও ক্যাম্পাসে আরো কয়েক ধরনের ইফতারের আয়োজন লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন জেলা, উপজেলার শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক সংগঠনের ইফতার, রাজনৈতিক নেতাদের আয়োজনে ইফতারসহ আরো কিছু সমন্বিত ইফতার ক্যাম্পাসে লক্ষণীয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রতিদিন মধুর ক্যান্টিনের সামনে প্রায় ২০০ মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে তিন শতাধিক মানুষের জন্য ইফতার আয়োজন করা হয়। ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরও কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে ক্যাম্পাসের আইন অনুষদের মাঠ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ইফতার করতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, পরিবারের সাথে ইফতার না করার যে ঘাটতি সেটি এখানে ইফতার করার মাধ্যমে পুষিয়ে যাচ্ছে। রমজানের সময় বাড়িতে থাকলে পরিবারের সাথে ইফতার করা হতো। কিন্তু এখন সেটা হয়ে উঠে না। পরিবার না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে সবাই মিলে টিএসসিতে বসে যে একসাথে ইফতার করছি সেটি পরিবারের সাথে না থাকার ঘাটতিটা পূরণ করে দিচ্ছে। সবার সাথে ইফতারের এক অসাধারণ অনুভূতি।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আফসানা মিম বলেন, ক্যাম্পাসে ইফতার করার মধ্যে একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। রোজাদারের জন্যে ইফতারের মুহূর্তটা এমনিতেই স্পেশাল। তার ওপর সবার সাথে ইফতার করার মধ্য দিয়ে পরিবারের সদস্যদের শূন্যতা পূরণ হয়ে যায়। আমার মনে হয়, রমজানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য এখানেই।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নয়, এই আমেজ থেকে বঞ্চিত হতে চান না স্বাভাবিক সময়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা সাবেক শিক্ষার্থী এবং আশপাশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। তারাও বিভিন্ন স্থান থেকে ইফতার সংগ্রহ করে টিএসসি, মলচত্বর কিংবা সবুজ চত্বরের সবুজ ঘাসের ওপর ইফতার করেন। সারা দিনের রোজার ক্লান্তি ভুলে পরিবারের মানুষের শূন্যতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন দ্বিতীয় পরিবারের সাথে সঙ্গ দিয়ে।