বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের কাছে অন্তর্বর্তী সরকার নতি স্বীকার করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংগঠনটির দাবি, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত আইনের অধীনে গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করে সরকার গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি এই নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান করছে।
রোববার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন, ২০২২ সালে তৎকালীন অবৈধ ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের একটি আইন প্রণয়ন করেছিল, যা “প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার আইন-২০২২” হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের ওই আইন তখন বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ওই আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটি গঠন করে। অথচ জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ওই আইন বাতিল করাটাই যুক্তিযুক্ত হতো। তিনি বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সম্পর্কে সার্বিক প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করা তাদের কাজ। বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ওই কমিশন কাজ শুরু করেছে দুই মাসও হয়নি। তাদের প্রথম কাজই হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পদ্ধতি ঠিক করা। তারা কোনো প্রস্তাব দেয়ার আগেই ইতিমধ্যে সরকার ইসি গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও আইনটি বদলানোর পক্ষে বলে উল্লেখ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংগঠনটি বলেছে, ইতিমধ্যে সংস্কার কমিশন একটি নতুন আইনের খসড়া তৈরি করেছে, যা সরকারের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সার্চ কমিটি গঠন করে ফেলায় এ কাজ আর এগোবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের আগে সংস্কার কমিশনের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে সার্চ কমিটি গঠিত হয়ে যাওয়ার পর এই দফায় কমিশন গঠনের জন্য নিয়োগের আইনটির সংস্কার অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সরকারের ইসি গঠনের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় জাতীয় নাগরিক কমিটি। জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্য উপদেষ্টাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন দেখতে চায়। ড. ইউনূস দৃঢ়তার সঙ্গে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেবেন বলে শিক্ষার্থী, তরুণসমাজ ও অভ্যুত্থানের শরিকেরা প্রত্যাশা করেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সদস্য সারোয়ার তুষার প্রমুখ বক্তব্য দেন।