শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
‘একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের এমন বক্তব্য নিয়ে আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আগামী ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (৫ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের আদালত এ আদেশ দেন।
এ দিন বেলা সাড়ে ৩টায় চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের এডহক কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশীদ। শুনানিতে তিনি বলেন, এটা খুই দুঃখজন আদালত অবমাননার আবেদন। আমরা চাচ্ছি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করে দেবেন।
এ সময় আদালত বলেন, কোর্টের রায় নিয়ে নানা লোকে না কথা বলে। রায় পক্ষে গেলে এক রকম, বিপক্ষে গেলে অন্যরকম কথা বলে। একটি রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতির কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে।
জবাবে আইনজীবী মহসিন রশীদ বলেন, এ ধরনের আদালত অবমাননার অভিযোগ আমলে নেয়া উচিত।
এরপর আদালত মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ১৪ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
শুনানির সময় আদালতে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট বার এডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারার মো: কামাল হোসেন, সাবেক সহ-সম্পাদক মাহবুবুর রহমান খান প্রমুখ।
অন্যদিকে চেম্বার আদালতের আদেশের পর আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে মেয়র তাপসের পক্ষে বিক্ষোভ করেন।
এর আগে রোববার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল এ আবেদন করেন। আবেদনে আদালত অবমাননার অভিযোগে মেয়র তাপসকে স্বশরীরে তলবের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৪ মে ‘একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম’ মেয়র তাপসের এমন বক্তব্য সম্বলিত একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রধান বিচারপতির আদালতের নজরে আনেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ।
ওইদিন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চে প্রতিকায় প্রকাশিত ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের কিছু বক্তব্য নজরে আনেন তিনি। এ সময় আপিল বিভাগে কয়েকশ’ বিএনপি সমর্থক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
আপিল বিভাগে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন পড়ে বলেন, এটা আনফরচুনেট।
জবাবে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আমরা এটা দেখি। আমরা এটা ভালো করে পড়ে দেখি।
এ সময় ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির আবেদন করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা দেখি, পড়ি। পরে সিদ্ধান্ত।
ওইদিন আদালত থেকে বেরিয়ে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেছিলেন, পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম’ এটা কত বড় অবক্ষয়, তা আমরা প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নজরে এনছি। আমরা প্রত্যাশা করছি আপিল বিভার ফুল বেঞ্চে বিষয়টি উঠবে এবং তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, এতে সারা দেশের মানুষ মনক্ষুণ্ন হয়েছে। বারের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, সেটাও আপনারা দেখেছেন। এই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস যে মন্তব্য করেছেন তা অত্যান্ত উদ্ধত্যপূর্ণ। এটা আদালত আবমাননার শামিল।
গত ২৩ মে মঙ্গলবার দৈনিক মানবজমিন প্রতিকায় প্রকাশিত ‘একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়ে, মনটা চায় আবার ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসি। যেখানে মুগুর দেয়ার সেটাও জানি। একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম। মশিউজ্জামানকে (বারের গত নির্বাচনের সাব কমিটির প্রধান) আমরা মনে করতাম, ওরে বাবা, কী জানি ফেরেস্তা আসছে। সবচেয়ে বড় চোর হলো মশিউজ্জামান। যে সকল সুশীলরা আমাদেরকে বুদ্ধি দিতে যাবেন সেই সকল সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেবো। গত ২১ মে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। নয়া দিগন্ত