বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ডিপার্টমেন্ট স্টোরে যৌন আক্রমনের দায়ে ট্রাম্পকে ৫০ লাখ ডলার জরিমানা

উনিশশ নব্বই’র দশকে নিউইয়র্কের একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরে একটি ম্যাগাজিনের কলামিস্টকে যৌন আক্রমণ করার জন্য ডেনাল্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ম্যানহাটনের একটি জুরি।

তবে ই জিন ক্যারোল নামের ওই নারীকে বার্গডর্ফ গুডম্যান নামের স্টোরের পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে ধর্ষণ করার বিষয়ে মি. ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি।

জুরি বলেছে , মিজ ক্যারোল-এর আনা অভিযোগকে “প্রতারণা এবং মিথ্যা” বলে অভিহিত করার মাধ্যমে মি. ট্রাম্প ওই নারীর মানহানি করেছেন। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো যৌন আক্রমণে জড়িত থাকার জন্য মি. ট্রাম্প আইনগতভাবে দায়ী হলেন।

এ ঘটনায় ম্যানহাটনের আদালত মি. ট্রাম্পকে ৫০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিয়েছে।

মঙ্গলবার ছয় জন পুরুষ ও তিন জন নারীর সমন্বয়ে গঠিত জুরি তিন ঘণ্টারও কম সময় যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের পর তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

রায়ের পর মিজ ক্যারোল এক বিবৃতিতে লিখেছেন, “আজ অবশেষে বিশ্ব সত্য জানলো।”

“এই জয় শুধু আমার জন্য নয় বরং প্রতিটি নারীর জন্য যারা এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন কিন্তু কেউ তাদের কথা বিশ্বাস করেনি।”

মি. ট্রাম্পের আইনজীবী বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট।

বিচারকাজটি ফৌজদারি আদালতে না হয়ে দেওয়ানি আদালতে হওয়ার কারণে মি. ট্রাম্পকে একজন যৌন নির্যাতক হিসেবে নথিবদ্ধ হতে হবে না।

সাবেক প্রেসিডেন্ট যিনি মিজ ক্যারোলের আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি ম্যানহাটন ফেডারেল কোর্টে গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা বিচারকাজে উপস্থিত ছিলেন না।

৭৯ বছর বয়সী মিজ ক্যারোল রায় পড়ার সময় তার দুই আইনজীবীর হাত ধরে ছিলেন এবং বিচারকরা তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার পক্ষে রায় দেয়ার পর তিনি হাসেন।

মি. ট্রাম্পের আইনজীবী জো টাকোপিনা বিচারকাজ শেষ হওয়ার পর তার সাথে করমর্দন করে বলেন, “অভিনন্দন এবং শুভ কামনা।”

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রবার্টা কাপলান এক বিবৃতিতে জানান: “এই জয় শুধু ই জিন ক্যারোলের নয়, বরং গণতন্ত্রের জন্য এবং সব নির্যাতিতার জন্য।”

বিচারের পর ৭৬ বছর বয়সী ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যালে সব হরফে লিখেছেন: “আমার আসলেই কোন ধারণা নেই যে এই নারী কে?”

এই বিচারকে একটি ‘কলঙ্ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন মি, ট্রাম্প।

দেওয়ানি আদালতে যে ধরণের প্রমাণ হাজির করা হয়, তার গুণগত মান ফৌজদারি আদালতের চেয়ে কম।

দুই সপ্তাহের বিচার

বিচার অনুষ্ঠানের সময় মি. ট্রাম্প এবং মিস ক্যারোলের আইনজীবীরা উত্তেজনাপূর্ণ জেরায় অংশ নেন।

তার আইনি দল ১১ জন সাক্ষীকে ডেকে তার দাবির সত্যতা প্রমাণ করে যে মি. ট্রাম্প তাকে ১৯৯৫ বা ১৯৯৬ সালে বিলাসবহুল দোকানের অন্তর্বাস বিভাগে লাঞ্ছিত করেছিলেন।

এদের মধ্যে দু’জন নারীও রয়েছেন যারা আরও বলেছে যে, তারা কয়েক দশক আগে মি. ট্রাম্পের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। একজন নারী বিচারকদের বলেছিলেন যে মি. ট্রাম্প ১৯৭০ এর দশকে একটি ফ্লাইটের সময় তাকে ধরেছিলেন। অন্য একজন নারী বলেছেন যে, ২০০৫ সালে লেখা একটি নিবন্ধের জন্য সাক্ষাৎকার নিতে গেলে মি. ট্রাম্প তাকে জোরপূর্বক চুম্বন করেছিলেন।

মিস ক্যারোলের দীর্ঘ দিনের দুই বন্ধু তাদের সাক্ষ্যতে বলেছেন যে, ওই ঘটনার পর পরই মিস ক্যারোল তা তাদেরকে জানিয়েছিলেন।

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মিস ক্যারো তার সাথে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার পুঙ্খানুঙ্খ বর্ণনা তুলে ধরেন এবং এর কারণে তাকে যে মানসিক কষ্টদায়ক সময় পার করতে হয়েছে তাও তুলে ধরেন।

আদালতে তিনি বলেন, “আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাকে ধর্ষণ করেছিলেন এবং যখন আমি এটি সম্পর্কে লিখেছিলাম, তখন তিনি মিথ্যা বলেছিলেন এবং বলেছিলেন যে এটি ঘটেনি।”

মি. ট্রাম্প তার পক্ষে কোন সাক্ষীকে ডাকেননি এবং বিচারকদের জন্য চালানো একটি জবানবন্দিমূলক ভিডিওতেই তার উপস্থিতি ছিল। যেখানে তিনি ধর্ষণ করার কথা অস্বীকার করেছেন।

ভিডিওতে মি. ট্রাম্প বলেন, “এটি সবচেয়ে হাস্যকর, জঘন্য গল্প।” “এটা পুরোটাই বানোয়াট।”

মিস ক্যারোলের মামলায় আরও যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, মি. ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে ২০২২ সালের অক্টোবরে একটি পোস্টে তার মানহানি করেছিলেন। যেখানে তিনি তার অভিযোগগুলোকে “সম্পূর্ণ ভুল কাজ” এবং “একটি প্রতারণা এবং মিথ্যা” বলে অভিহিত করেছিলেন।

তার আইনি দল যুক্তি দিয়েছিল যে, মি. ট্রাম্প তার জবানবন্দির সময় “নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষী” হিসাবে কাজ করেছেন। ওই জবানবন্দীতেও তিনি ২০০৫ সালে যে মন্তব্য করেছিলেন সেটিই আবারো বলেছেন।

অ্যাকসেস হলিউড টেপ নামে পরিচিত এবং ২০১৬ সালে ফাঁস হওয়া অডিওতে মি. ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে নারীরা তারকাদের যে কোন কিছু করতে দেয় এমনকি তাদের যৌনাঙ্গ ধরার মতো কাজও।

মিস ক্যারোলের আইনজীবী বলেন, তিনি তার সাথে সেটিই করেছিলেন।

রেকর্ড করা ভিডিও জবানবন্দিতে, মি. ট্রাম্প এক পর্যায়ে মিস ক্যারোলকে তার প্রাক্তন স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। যা মিস ক্যারোলের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়ে বলেন যে, এটি মি. ট্রাম্প যে দাবি করেছিলেন যে, তিনি(মিস ক্যারোল) “তাঁর টাইপ নন”, সেটিকে দুর্বল করে দিয়েছে।

মি. টাকোপিনা মিস ক্যারোলের গল্পে সন্দেহ প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন, যাকে তিনি “কল্পকাহিনী” বলে অভিহিত করেছিলেন।

তিনি প্রশ্ন করেছিলেন যে, কেন মিস ক্যারোল হামলার তারিখ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। এই বিষয়টি ওই ঘটনার সময় মি. ট্রাম্প যে সেই স্থানে উপস্থিত ছিলেন না সেটি প্রমাণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে বলে যুক্তি তুলে ধরেন।

“কোন তারিখ, কোন মাস, কোন বছর উল্লেখ না থাকলে আপনি এই আর্জি উপস্থাপন করতে পারবেন না, আপনি সাক্ষীদের ডাকতে পারবেন না,” মি. টাকোপিনা বলেছিলেন।

“তারা যা চায় তা হল আপনি তাকে এমন ঘৃণা করবেন যে সত্যটা আপনি জানতে পারবেন না।”

মি. টাকোপিনা আরো জোর দিয়ে বলেন যে, ঘটনা ঘটার পর পরই কেন তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি বা ঘটনা ঘটার সময় কেন তিনি চিৎকার করেননি।

প্রাক্তন এলি ম্যাগাজিনের কলামিস্ট ২০২২ সালে নিউইয়র্ক অ্যাডাল্ট সারভাইভারস অ্যাক্ট পাস করার পর মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা আনতে সক্ষম হন।

রাজ্যটিতে এই আইনটি যৌন নিপীড়নের ভুক্তভোগীদের জন্য ঘটনা ঘটার এক বছর পর সময় পর্যন্ত মামলা দায়ের করার সুযোগ দিয়েছে। বিবিসি বাংলা

আরো পড়ুন ...