সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
ভারতের পূর্বাঞ্চলের ওডিশা রাজ্যের বালাসোর এলাকার কাছে গতকাল শুক্রবার রাতে তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষে ২৮৮ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ৯০০ এর মত।
ভারতের রেল দুর্ঘটনার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে উত্তরবঙ্গের গাইসালে। আসাম-অবধ এক্সপ্রেস এবং ব্রহ্মপুত্র মেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৯৯৯ সালের ২রা আগস্ট প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৮৫ জন। শুক্রবার সন্ধ্যায় হাওড়ার শালিমার থেকে ছাড়া করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৮৮ টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মৃতদেহ পড়ে আছে বলে উদ্ধারকারীদের অনুমান। শনিবার ভারতীয় সময় সকাল নটা নাগাদও উদ্ধার কাজ চলছে। দুর্ঘটনাস্থলে বিচ্ছিন্ন হাত, পা পড়ে আছে। সম্ভবত শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশার বালাশোর থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে বাহানাগা বাজারের কাছে ঘটা এই দুর্ঘটনাটি ভারতের বৃহত্তম রেল দুর্ঘটনায় পরিণত হতে চলেছে। কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক নিহতদের পরিবারকে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আহতদের পরিবার পাবে পঞ্চাশ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘটনার পরই টুইট করে জানিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নিহতদের পরিবারকে দু লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।
গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তৃণমূল এর একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন। পাঠিয়েছেন দশ চিকিৎসক এর একটি দল, বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স ও শববাহী গাড়ি। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পটনায়কও শুক্রবার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। মোট একান্ন জোড়া ট্রেন বাতিল হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুজন বাংলাদেশিও আছেন যাঁরা চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাচ্ছিলেন। তাঁদের বালাশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত দুই বাংলাদেশির একজন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কি করে ঘটলো এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা? বেলা তিনটে কুড়ি নাগাদ করমন্ডল এক্সপ্রেস ছাড়ে হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে। বালাশোর থেকে কুড়ি কিলোমিটার এগিয়ে বাহানাগা বাজারের কাছে একটি মালগাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় করমন্ডল এক্সপ্রেস। এই ঘটনার একটু আগেই সেখানে বেঙ্গালুরু-হাওড়া যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস এর দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। করমন্ডল এক্সপ্রেস এর একাংশ গিয়ে পড়ে তার ওপর। বেশ কয়েকটি বগি যা ছিল করমন্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন লাগোয়া তা মুহূর্তের মধ্যে ধূলিসাৎ হয়। জায়গাটি নির্জন হওয়ায় উদ্ধারকারীরা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করতে সামান্য বিলম্ব হয়। ঘটনার ১৪ ঘণ্টা পরে শনিবার সকালেও উদ্ধার কাজ চলছে। একটির পর একটি মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে আর কান্নার রোল উঠছে। বালাশোরের তিনটি হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।