বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে ফেনীর উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বন্যাদুর্গতরা। এখন পর্যন্ত একজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং একজনের নিখোঁজ হওয়ার খবর মিলেছে। উদ্ধার করা হয়েছে চার শ’ জনকে।
ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট ও আমজাদহাট ইউনিয়নের ৪০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার রাত ১০টার দিকে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর পশ্চিমমাথা এলাকায় চার বন্ধুর সাথে বেড়িবাঁধের ভাঙনকবলিত স্থানে মাছ ধরতে যান মিজানুর রহমানের ছেলে মো: রাজু। একপর্যায়ে প্রবল স্রোতে ভেসে যান তিনি। স্থানীয়রা রাজুকে উদ্ধার করে ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ ও পৌরশহরসহ ৪৫টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এছাড়াও ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রামে বন্যা হচ্ছে।
এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। এরমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চাল পর্যন্ত ছুয়েছে বন্যার পানি। আশ্রয়ের খোঁজে স্থানীয়রা। বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
পরশুরামের সলিয়া এলাকার বাসিন্দা হাবিব স্বপন বলেন, আমাদের ত্রাণের চেয়েও এখন নৌকা বা স্পিডবোট বেশি প্রয়োজন। এখন কোথাও যাওয়ার উপায় নাই। এছাড়া সোমবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। খাবার ও পানি নেই।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, পরশুরাম উপজেলার পরশুরাম পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি অসংখ্য মানুষ। গতকাল রাত ১২টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রদের সহায়তায় দু’টি ডিঙি নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রায় এক শ’ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইউএনও আরো বলেন, জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজনের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরো পাঁচ শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫০ টন চাল মজুদ রয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানির উচ্চতা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় তিন শ’ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরো পাঁচ শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৮ টন চাল মজুদ রয়েছে।
এখন পর্যন্ত একজন মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানান তিনি।
ফেনী জেলা প্রশাসক মুসাম্মত শাহীনা আক্তার বলেন, ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধার অভিযানে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
গত মাসের মাসের শুরুতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১৫ স্থানে ভাঙন দেখা যায়। সেসময় মেরামত করা হলেও চলতি মাসের শুরুতে বাঁধের আরো ১২ জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়।
দেড়মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফার বন্যায় বাঁধ ভেঙে অবকাঠামো, ধান, ফসল ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ১৫ দিনের মাথায় আবারও দেখা দিলো বন্যা।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মুনীর হোসেন।
সূত্র : ইউএনবি