বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
আজ বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। নানা চ্যালেঞ্জের বেড়াজালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে আছে দলটি।
সাংগঠনিকভাবে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও মামলা ও গ্রেফতারে নেতাকর্মীদের নাজেহাল অবস্থা। দলটির শীর্ষ কাণ্ডারি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সরাসরি পাশে পাচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। এ পরিস্থিতিতে সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
সরকারের পদত্যাগসহ নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে দলটি। যাকে নেতারা বলছেন, ‘ফাইনাল’ পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় সফল না হলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে এ আন্দোলন বিএনপির জন্য ‘বাঁচা মড়ার লড়াই’।
নীতিনির্ধারকরা জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ই তাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য দলের চোখ এখন চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল।
এখন যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা এবং জোটের বাইরে অন্যান্য দলকেও একই দাবিতে আলাদাভাবে রাজপথে চান। যা চলতি মাসেই দৃশ্যমান হবে বলে আশা করছেন। এখন দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখাসহ আন্দোলনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন তারা।
এ অবস্থায় বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে এবার দুদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৭৮ সালের এই দিনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এসে দলটির হাল ধরেন।
তার নেতৃত্বে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দুইবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে বিএনপি। দুর্নীতির মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিনে বাসায় থাকার অনুমতি পেলেও সক্রিয় রাজনীতিতে নেই তিনি। বর্তমানে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ছেলে তারেক রহমান ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ নিয়ে দল পরিচালনা করছেন। এ অবস্থায় নেতাকর্মীরা মনে করেন, নানা শঙ্কা থাকলেও দলের বড় সাফল্য হচ্ছে, বিএনপি ভাঙেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে নানা ‘কৌশলে’ এগোতে হবে। আগামী দিনে আন্দোলনের মাত্রা আরও তীব্র করে রাজপথ দখলের পাশাপাশি ভারত-যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার মাধ্যমে কূটনৈতিকভাবে আরও চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এবার আন্দোলনের সফলতা ঘরে নিতে না পারলে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে দলটি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। শত বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে সাহস ও সাফল্যের সঙ্গে সব মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে এই সরকার। ছয়শ মানুষকে গুম করেছে।
এক হাজারেরও অধিক মানুষকে হত্যা করেছে। আমাদের শীর্ষ নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিনা দোষে ষড়যন্ত্র করে কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।
শীর্ষ নেতারা যারা আছেন সবাই বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত, কারাগারে আছেন অনেকে। এ রকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপি শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। সব পর্যায়ের ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মধ্যে আছেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপিতে কোনো সংকট নেই। বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে আছে। যা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাচ্ছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই বিএনপির এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আর নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো আছে, তা জনগণের সামনে দৃশ্যমান। বাধাগুলো আমাদের অতিক্রম করতে হবে, মোকাবিলা করতে হবে। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্তগুলো পূরণ করার জন্য আমাদের যা যা করা দরকার, তা-ই করতে হবে।
নেতারা মনে করেন, চলমান আন্দোলনে সফল হতে গেলে রাজপথে বড় রকমের ঝাঁকুনি দিতে হবে। পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের মনোভাব একযোগে ইতিবাচক হওয়া খুবই জরুরি। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে রাজপথে সফলতার পাশাপাশি বিএনপিকে কূটনৈতিকভাবেও সফল হতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনপ্রিয়তা থাকার পরও ভুল রাজনীতির কারণে এখনো ‘চোরাগলিতে’ আটকে আছে বিএনপি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট আগের চেয়ে ভিন্ন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ, দেশের রাজনৈতিক দল সবাই দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এই বিষয়টিই সরকারকে শোনাতে এবং তাদের রাজি করাতে হবে বিএনপিকে। শুধু আন্দোলন করে হবে না, আলোচনার পথও খোলা রাখতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশের যে বর্তমান সমস্যা তা রাজনীতিবিদরাই সৃষ্টি করেছে। এখন তাদেরই সমাধান করতে হবে। আলাপ-আলোচনা করে এমন একটা ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হয়। এজন্য নির্বাচন কমিশন, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে আচরণ করতে হবে। যেন একটা সমতল ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। যাতে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়।’
কর্মসূচি : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-আজ ভোর ৬টায় কেন্দ্রসহ সারা দেশের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি।
ফকিরাপুল মোড়, নটর ডেম কলেজ, শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড় হয়ে রাজধানী মার্কেটে গিয়ে র্যালি শেষ হবে। একইভাবে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরসহ সব ইউনিটে তাদের সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা, র্যালি কর্মসূচি পালন করবে।