রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, পরিবর্তন আসছে। জনগণের জয় হবে, ইনশাআল্লাহ।’
রোববার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি নেতাকর্মীদের এ আশার বাণী শোনান।
রবিবার (১৩ আগস্ট) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর ৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কথায় আছে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। বাতাসে সেই কল নড়তে শুরু করেছে। এখন সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। দেশের সব মানুষ একবাক্যে শেখ হাসিনার পতন চায়, এই সরকারের পতন চায়। তারা সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়। আমরা একটি মুক্ত, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই যেখানে সবার অধিকার নিশ্চিত হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরির জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। যেখানে সবার সমান সুযোগ থাকবে। মানুষ তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে। সেখানে আজ কিছু সংখ্যক মানুষের হাতে রাষ্ট্র দখল হয়ে গেছে। তারা সব ক্ষেত্র দখল করে নিয়েছে। গণতন্ত্র ছাড়া কখনও এগুলো ঠিক হবে না। অর্থাৎ ধ্বংস হওয়া ছাড়া কোনও ফ্যাসিস্টের হাতে কখনও কোনও দেশের মঙ্গল হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন– বাংলাদেশের নির্বাচন নাকি এখন দেশে নেই, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী আবার বলেছেন– বিএনপির সঙ্গে বাইরের কোনও শক্তি নেই। এসব কথা বলার উদ্দেশ্য, তারা (সরকার) কত ভয় পেয়েছে, কত সন্ত্রস্ত হয়ে গেছে যে আজ সব জায়গা থেকে বলা হচ্ছে, তোমাকে (শেখ হাসিনা) সুন্দর, সঠিক, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। সেই কারণে তারা এসব কথা বলতে শুরু করেছে।’
আওয়ামী লীগকে ‘কূটকৌশলী ও ভয়াবহ’ অভিহিত করে তিনি আরও বলেন, ‘মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি বাড়িতে হঠাৎ করে জঙ্গিবিরোধী অভিযান হয়েছে। সেখান থেকে ছয় নারী, চার শিশু ও চার পুরুষকে গ্রেফতার করেছে। সঙ্গে নাকি তিন কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। হঠাৎ করে এগুলো কোথা থেকে এলো? কারা আনলো? কীভাবে আনলো? যখন আন্দোলন ঊর্ধ্বে থাকে তখন জঙ্গি নাটক অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকবার, প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি হয়। এখন দেখবেন, জঙ্গির কথা বলে বলে মানুষকে ডাইভার্ট করবে। তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নেবে। পশ্চিমা বিশ্বকে আবার জুজুর ভয় দেখাবে। বলবে– এই দেখো, বাংলাদেশে আমরা যদি না থাকি তাহলে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এভাবে নাটক করতে করতে তারা (আওয়ামী লীগ) এই জায়গায় এসেছে।’
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘ডব্লিউএইচও বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিততে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে। মানে সবচেয়ে উঁচু একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে। প্রতিদিন ১০-১৪ জন করে মারা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের কথা শুনে একবারও মনে হয় না এই বিষয়ে তাদের উদ্বেগ আছে। জেলখানায় আমরা যেভাবে সারি করে শুয়ে থাকি, তেমনি মুগদা হাসপাতালের মেঝেতে শিশুরা শুয়ে আছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা হচ্ছে। এত উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্ট, তারপরও কেনে বাচ্চারা সঠিক চিকিৎসা পাবে না? কারণ একটাই, শেখ হাসিনার সরকারের জনগণের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা নেই।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘অত্যন্ত অসুস্থ’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর যে কোনও সভ্য দেশে সরকার নিজে উদ্যোগ নিয়ে বিদেশে পাঠাতো। কারণ ডাক্তাররা বারবার বলছে, তার চিকিৎসা এখানে আর সম্ভব নয়। তার যে চিকিৎসা প্রয়োজন সেটা উন্নত দেশে, উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে করতে হবে। এরা (সরকার) এমন একটি প্রতিহিংসার জায়গায় চলে গেছে যে এরা মনে প্রাণে প্রতি মুহূর্তে চায় বেগম জিয়া মরে যাক। দেশের সোল, আত্মাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ পুরো দেশের মানুষ জর্জরিত। তাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে। চাল, ডাল, লবণ, তেল কোনও পণ্যের দামই আর সহনশীল অবস্থায় নেই। মানুষের শান্তি নেই, নিরাপত্তা নেই, রাস্তায় শান্তিতে বের হতে পারে না। আপনারা নিশ্চিত থাকেন, পরিবর্তন আসছে, পরিবর্তন হবে, সত্যের-সুন্দরের জয় হবে।’
বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম, বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব শহীদুজ্জামান শহীদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক সজল প্রমুখ। যুগান্তর, বাংলা ট্রিবিউন