রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের শোক

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম নামাজে জানাজা আজ দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর আগামীকাল (১৪ এপ্রিল) শুক্রবার সকাল ১০টায় সাভার গণস্বাস্থ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বাদ জুমা সেখানে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল বুধবার ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি গভীর শোক জানিয়েছেন।
শোকবাণীতে তারা বলেছেন, ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী জাতির সামনে একজন সেইফ গার্ড হিসেবে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের নায়ক, আইকন। সারাটা জীবন কাটিয়ে গেলেন কাউকে তোয়াক্কা না করে। জীবনকে ব্যয় করে গেলেন দেশের গরিব মানুষের জন্য। সৎ, নির্লোভ, নির্ভিক ৮১ বছরের চির তরুণ যাপন করে গেলেন সার্থক ও পরিপূর্ণ এক জীবন। অনুকরণীয়, অনুসরণীয় মানুষটির জীবনের কাহিনী মিথকেও হার মানায়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শোক জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ওষুধশিল্প ও জনস্বাস্থ্য খাতে ডা: জাফরুল্লাহর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় মরহুমের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজীবন দেশ, জাতি ও জনগণের কল্যাণে অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনগণের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসার জন্য গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী উন্নয়ন এবং সমাজ সংস্কারে ও বিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। রাষ্ট্রের সব সঙ্কটে তিনি এগিয়ে এসেছেন অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে।
গভীর শোক জানিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মানবতাবাদী সত্যিকার একজন দেশপ্রেমিক, বাঙালি জাতির সূর্যসন্তান। তার মৃত্যুতে আমরা একজন অভিভাবক হারালাম।
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। শোকবাণীতে তিনি বলেন, ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ প্রণয়নে বিরাট অবদান রেখে গেছেন। তিনি ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি দেশ, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আমি তার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার ভালো কাজগুলোর জন্য উত্তম প্রতিদান দিন এবং তার পরিবার-পরিজনদের ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন।
শোক প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন অনন্য। তিনি ছিলেন একজন সিভিল সোসাইটির মানুষ, যিনি দল করতেন না। একজন ব্যক্তি যিনি সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারেন, এমন উদাহরণ বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই। তিনি বলেন, কিছু কিছু চরিত্র গড়ে ওঠে ঐতিহাসিকভাবে, যার তুলনা করা খুব মুশকিল। কবি বলেন, আর রাজনৈতিক ব্যক্তি বলেন, একজনের সাথে আরেকজনের তুলনা করা যায়। কিন্তু জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন অনন্য মানুষ ছিলেন। তার যেসব গুণাবলি তা খুবই সাধারণ। কিন্তু সেটাই অসাধারণ হয়ে ওঠে। কারণ সাধারণের মধ্যে এটা পাওয়া যায় না, ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে যা আছে।
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেছা। তিনি গণস্বাস্থ্য পরিবার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও সহযোগী সংস্থাসমূহের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী (বড় ভাই) আত্মনিবেদন, কর্মনিষ্ঠা এবং সুদৃঢ় নৈতিক অবস্থান তাকে গণস্বাস্থ্য পরিবারের সবার কাছে শ্রদ্ধেয় ‘বড় ভাই’ করে তুলেছে। মানুষকে মর্যাদা দেয়ার বিষয়টি ছিল তার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি পরিচিতি যখন বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে তখনো সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার উন্নয়নই, অসহায় মানুষের সাহায্য ও বিনামূল্যে চিকিৎসা তার অগ্রাধিকার ছিল। সততা, বিনয় ও মানবিকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। তিনি সবসময় তার এসব গুণই গণস্বাস্থ্য প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠার ভিত্তি রচনা করেছে। ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যূতে গণস্বাস্থ্য হারাল তাদের অভিভাবককে, দেশ হারাল এক জীবন্ত কিংবদন্তি স্বপ্নবাজ মানুষকে। ’
শোকবার্তায় তিনি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর রূহের মাগফিরাতের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন অভিভাবক আমাদের বিপদে-আপদে ছিলেন। আমাদের মোদিবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা গ্রেফতার ছিলেন। তাদের জামিনের জন্য তিনি নিম্ন আদালতেও গিয়েছিলেন। আমাদের নিয়ে হাইকোর্ট অভিমুখে লংমার্চের মতো কর্মসূচি করেছেন। আমরা সাহস করতাম না জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাড়া এ কর্মসূচির। তিনি সবসময় আমাদের সেইফ গার্ড হিসেবে সামনে ছিলেন। তিনি আমাদের বলেছিলেন, তোমরা রাস্তায় থাকো। তোমাদের বিজয় লাভ করতে হবে। জাতির মুক্তির জন্য তোমাদের রাস্তায় থাকতে হবে। আমরা তার সেই পরামর্শ, দিকনির্দেশনা দেশের প্রত্যেকের জন্য প্রয়োজন। সেটা বাস্তবায়নের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাবো। তিনি বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী সততা ও দেশপ্রেমের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দলমত নির্বিশেষে সবাই তার কাছে আসতেন। তিনি কাউকেই খালি হাতে ফেরাতেন না। দেশের এ সঙ্কটে তাকে প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়াও শোক জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, লিবারেল ডেমোক্র্যাডিট পার্টি-এলডিপি, এবি পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, কল্যাণ পার্টি, ১২ দলীয় জোট, মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলতাফুন্নেছা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, এনডিবি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিএলএনবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি।
গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টায় লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

আরো পড়ুন ...