শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
ঘোষিত ছয় দিনের কর্মসূচির প্রথম দিন মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সারা দেশে লিফলেট বিতরণ করেছে বিএনপি। ‘ডামি নির্বাচনে ডামি সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান খুন, ধর্ষণ, গ্যাস ও জ্বালানি সংকটের’ প্রতিবাদ জানিয়ে এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে দলটি। এতে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষারও’ আহ্বানও জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কর্মসূচির প্রথম দিন ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে গণসংযোগ কর্মসূচি চলছে। রাজধানীতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ মহানগরের নেতারা প্রচারণায় অংশ নেন।
লিফলেটে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকাও প্রকাশ করা হয়। সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি জনসাধারণের উদ্দেশে লিফলেটে বলা হয়েছে, আসুন, আমরা আরও ঐক্যবদ্ধ হই এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে অনির্বাচিত অবৈধ সরকারের অবসান ঘটিয়ে তাদের অপশাসন, লুটপাট, দুর্নীতি, অনাচার ও অত্যাচার থেকে দেশকে মুক্ত করি এবং নিজেরা মুক্ত হই। এই ন্যায়যুদ্ধে বিজয় আমাদেরই হবে, ইনশাআল্লাহ।
‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ শীর্ষক লিফলেটে আরও উল্লেখ করা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণকারী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং আপসকামিতার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। অরক্ষিত সীমান্তে দেশের নাগরিকরা একের পর এক খুন হচ্ছেন। অথচ নতজানু সরকার কার্যকর কোনও প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধ করতে পারে না।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এই লিফলেট নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন বিএনপির নেতারা। রুহুল কবির রিজভী ফকিরাপুল ও নয়া পল্টন এলাকায় তার অনুসারীদের নিয়ে লিফলেট বিতরণ করে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেয় জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পল্লবী এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডে লিফলেট বিতরণ করেন মহানগর কমিটি উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক। এসময়ে তার সঙ্গে পল্লবী থানা বিএনপি সহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা সাধারণ মানুষের কাছে, রিকশা, ভ্যান ও বিভিন্ন গাড়ি চালক, পথচারী, দোকানদারদের হাতে লিফলেট বিতরণ করেন।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি নতুন করে বিএনপির ছয় দিনের কর্মসূচির কথা জানান রুহুল কবির রিজভী। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে গণসংযোগ ও লিফলেট এবং ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন দেশের অভ্যন্তরে শহিদ বাংলাদেশিদের স্মরণে ১৬ ফেব্রুয়ারি জুমার নামাজের পর দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মাগফিরাত কামনা; ১৭ ফেব্রুয়ারি সব জেলা শহরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ; সব উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হবে ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি।
বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি। যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চ এই প্রচারণায় নেই, তবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি রয়েছে জোটটির। শায়রুল কবির খান জানান, মঙ্গলবার মতিঝিলের দিলকুশা এলাকায় প্রচারণা করেছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দলের স্থায়ী কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে উল্লেখ করেছেন, ‘মানুষের সমস্যাকে সামনে রেখে ধীরে-ধীরে মাঠে যাবে বিএনপি। আপাতত নেতাকর্মীদের মুক্তি; লিফলেট প্রচারণাসহ সাধারণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের এক বলয়ে আনার কাজ চলবে। সরকারের আচরণও এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হবে।’
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রথম যুগপৎ ধারায় কর্মসূচি পালিত হয়। সেটি ছিল গণমিছিল। এরপর ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা’র এক দফা দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ পদযাত্রা কর্মসূচি হয়েছে ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই। বিদায়ী বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে ৫ দফা হরতাল, ১৩ দফা অবরোধ ও ১৩ দফা গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হয়। সর্বশেষ এ বছরের ৩০ জানুয়ারি কালো পতাকা মিছিল হয়।
অন্তত ৩৯টি রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ ধারায় কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব দল ও জোট হলো, গণতন্ত্র মঞ্চ (৬ দলীয় জোট), ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম-পিপলস পার্টি (দ্বিদলীয় জোট), সমমনা জোট (১১), গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য (৪ দল)। এককভাবে পালন করেছে বিএনপি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি। বাংলা ট্রিবিউন