বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের ফরেন রিজার্ভ সরিয়ে নিরাপদ দেশসমূহে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মঙ্গলবার অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান এ রিট দায়ের করেন।
আজ রিট দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, রিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, দেশের জনগণকে নিকট ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য জনস্বার্থে রিট আবেদনটি দায়ের করেছি।
রিটে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি। পৃথিবীর যে কোনো দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো ধ্বংস করার ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সামরিক শক্তি বা নিষেধাজ্ঞা বা উভয়ই প্রয়োগ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক শক্তি ব্যবহার করে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ভিয়েতনাম সহ বহু দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা (ঝধহপঃরড়হ) প্রয়োগ করে ইরান, রাশিয়া, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, ইরাক, সুদান, ভেনেজুয়েলা সহ বহু দেশের অর্থনীতিকে পর্যুদস্ত করে ফেলেছে ।
বর্তমানে বাংলাদেশকে নিয়ে নানামুখী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বিস্তার লাভ করেছে। ওই ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ দুঃখজনকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। যার দরুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। র্যাবের কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থাকলেও বাংলাদেশের আইনের শাসন রক্ষা, মাদক ও মানব পাচার দমনে র্যাবের অবদান অপরিসীম। অপরদিকে বিগত ২৪.০৫.২০২৩ তারিখে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যা নিষেধাজ্ঞার চেয়ে মারাত্মক।
ওই ভিসা নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, বিজ্ঞ বিচারকদের টার্গেট করা হয়েছে।
ওই রিট পিটিশনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের অভাব রয়েছে। অপরদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস সমূহে যেসব সরকারি কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন তাদের অধিকাংশের ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ বিষয়ের উপর অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি নেই । ফলশ্রুতিতে এসব সরকারি কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ অবদান রাখতে পারছে না ।
বাংলাদেশে বিশ্বে অন্যতম শান্তি প্রিয় একটি দেশ। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করে বাংলাদেশ বহিঃবিশ্বের সাথে শান্তি পূর্ণ সহঅবস্থান বজায় রেখে চলেছে। কিন্তু বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ দুঃখজনকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। কোন দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে পরিণত হলে তাদের ফরেন রিজার্ভ জব্দ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো রীতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে বহু দেশের ফরেন রিজার্জ জব্দ করেছে এবং তাদের অর্থনীতি পর্যুদস্ত করে ফেলেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এরূপ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে যেকোন অজুহাতে বাংলাদেশের ফরেন রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জব্দ হতে পারে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ ফরেন রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে জমা আছে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন “বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২” এর ধারা ৭ (এ) (ডি) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক ফরেন রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা করে থাকে। যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ ফরেন রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে জমা থাকে তাই ওই ফরেন রিজার্ভ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক যেকোনো অযুহাতে জব্দ হয় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য আমদানি করতে পারবে না । এতে করে বাংলাদেশের জনগণের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এবং বহু লোকজন খাদ্যের অভাবে মারা যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে যেসব দেশের ফরেন রিজার্ভ জব্দ করেছে সেসব দেশের জনগণকে অবর্ণনীয় কষ্ট শিকার করতে হয়েছে।
বাংলাদেশকে কেন তার অধিকাংশই ফরেন রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাখতে হবে ? বাংলাদেশের অধিকাংশ ফরেন রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাখার কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে অবশ্যই নূন্যতম যতটুকু রিজার্ভ নিয়মিত ট্র্যানজেকশনের জন্য প্রয়োজন ততটুকু রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রেখে বাদবাকি রিজার্ভ বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ দেশ যেমন: চীন, ভারত, রাশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা ইত্যাদি দেশে স্থানান্তর করতে হবে। এ ছাড়া রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য অংশ স্বর্ণ, হীরা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুতে রূপান্তর করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভের সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া উক্ত রিটে বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি মোকাবেলায় সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যার্থতার জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কে দায়ী করা হয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন কে অবশ্যই বিসিএস ফরেন ক্যাডারে শুধুমাত্র তাদেরকেই নিয়োগ দিতে হবে যাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি আছে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন দেশে দূতাবাস গুলোতে কূটনৈতিক নিয়োগের ক্ষেত্রে যাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি আছে তাদের কে নিয়োগ দিতে হবে । “আন্তর্জাতিক সম্পর্ক” জ্ঞানের একটি বিশেষায়িত বিষয় । উক্ত বিষয়ের মেধাবী ডিগ্রিধারীরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস গুলোতে নিয়োগ পেলে তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের জন্য ভাল অবদান রাখতে পারবে।