শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

ফ্রান্সের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নির্মাণ করা হবে

ফ্রান্সের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ফ্রান্সভিত্তিক ইউরোপীয় কোম্পানি এয়ারবাস থেকে দু’টি কার্গো বিমানসহ মোট ১০টি এয়ারক্রাফট কিনবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশের নগর সুশাসন ও অবকাঠামো উন্নয়নে ১৮৪ মিলিয়ন ইউরো বা প্রায় দুই হাজার ১৬৬ কোটি টাকার ঋণসহায়তা দিচ্ছে ফ্রান্স।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনা এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে স্যাটেলাইট ও নগর অবকাঠামোবিষয়ক দু’টি চুক্তি সই হয়। এ ছাড়া এয়ারবাস থেকে ১০টি এয়ারক্রাফট কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে দুই শীর্ষ নেতা একান্তে আলাপ করেন।

প্রসঙ্গত, ইতঃপূর্বে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটও ফ্রান্স নির্মাণ করেছিল। এটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছিল স্পেস-এক্স কোম্পানি।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এবং ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড ম্পেসের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম’ বিষয়ক লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) সই হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ফ্রান্সের ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট সংস্থার (এএফডি) মধ্যে সই হয় ‘ইমপ্রুভিং আরবান গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোগ্রাম’ বিষয়ক ঋণসহায়তা চুক্তি।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সাথে আমার সার্বিক বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নের সার্বভৌমত্বকে সম্মান ও সমর্থন জানিয়েছে ফ্রান্স। বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে এই নতুন কৌশলগত অগ্রযাত্রা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা উভয়েই আশাবাদী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বস্ত উন্নয়নসহযোগী হিসেবে ফ্রান্স আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত সুরক্ষা অবকাঠামো বিনির্মাণে উন্নত ও বিশেষায়িত কারিগরি সহায়তা প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এশীয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স নেতৃস্থানীয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় ফ্রান্সের অগ্রণী ভূমিকাকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায়। এ লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে একটি টেকসই তহবিল গঠনের আহ্বানকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ফ্রান্সের সাথে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভাষা বিনিময়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

ফরাসি ভাষায় রাখা বক্তব্যে ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ইউরোপীয় মহাকাশ শিল্পে আস্থা রাখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। ‘এ৩৫০’ মডেলের ১০টি এয়ারবাস কেনার জন্য প্রতিশ্রুতিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এর আগে গত রোববার রাত সোয়া ৮টায় ঢাকায় পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে অভ্যর্থনা জানান। রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তার সম্মানে দেয়া রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগ দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এরপর রাত ১২টায় চলে যান ধানমন্ডিতে সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী রাহুল আনন্দের বাসায়। সেখানে অবস্থান করেন প্রায় দুই ঘণ্টা। ওই সময়ে শিল্পীর গান শোনেন। রাহুল আনন্দ যে একতারা বাজিয়ে গান গেয়েছেন সেটি উপহার দেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে। তিনি সেটি হাতে পেয়ে বাজানোর চেষ্টাও করেন।
গতকাল সকালে ধান্ডমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এরপর তিনি পাশেই ধানমন্ডি লেকে হাঁটতে যান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে দুপুরে তুরাগ নদীতে নৌকা ভ্রমণ করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। ফ্রান্সের অর্থায়নে পরিচালিত এনজিও সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশিপ’ এই নৌকা ভ্রমণের আয়োজন করে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের স্ট্রিট ফুড হিসেবে জনপ্রিয় সিঙ্গারা চেখে দেখেন। তুরাগ থেকে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে বিশেষ ফ্লাইটে প্যারিসের উদ্দেশে রওনা দেন ম্যাক্রোঁ। বিমানবন্দরে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

রাতে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, কৌশলগত অংশীদারিত্বকে গভীরতর করতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের সংলাপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শান্তি, উন্নয়ন ও জনগণের অংশীদারিত্বকে কৌশলগত পর্যায়ে নিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। এতে বলা হয়, ফ্রান্স ও বাংলাদেশ সব রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। দুই দেশ মুক্ত, অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কৌশলগত ক্ষেত্রগুলোতে দুই দেশ সহযোগিতা জোরদার করবে। পানি শোধনাগার, ক্লিন এনার্জি, নগর উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু প্রকল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফ্রান্সের উন্নয়ন সহায়তায় বাংলাদেশ গভীরভাবে সন্তুষ্ট। দুই দেশ মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত বিশ্বব্যাপী খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির জোগানের ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ফ্রান্স মনে করে, জলবায়ু সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরাল করা প্রয়োজন। উভয় দেশ যৌথভাবে ‘মানুষ ও পৃথিবীর জন্য প্যারিস চুক্তি’ দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়। চলতি বছর দুবাইতে অনুষ্ঠেয় বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ ফলপ্রসূ করতে ফ্রান্স ও বাংলাদেশ একসাথে কাজ করবে। উভয় দেশ মনে করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা জোরদার হওয়া প্রয়োজন।

আরো পড়ুন ...