শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই তিতাস গ্যাসের প্রিপেইড মিটারের ভাড়া একলাফে দ্বিগুণ করেছে। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতির এই সময়ে মিটার ভাড়া বাড়ানোর এমন সিদ্ধান্ত জনজীবনে আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে। বাড়তি এ খরচ সমন্বয় করতে হিমশিম খাবে নিম্ন আয়ের মানুষ।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া মানবজমিনকে বলেন, এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি অর্ডার দেখেছি। এর বেশি কিছু বলতে চান নি তিনি।
গ্রাহকরা জানান, জানুয়ারিতে হঠাৎ করেই তাদের কাছ থেকে ১০০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা মিটার ভাড়া আদায় করছে তিতাস। দোকানে কার্ড রিচার্জ করতে গেলে সেখানে জানুয়ারি মাসে ২০০ টাকা মিটার চার্জ কাটার বিষয়টি খেয়াল করেন তারা। দোকানিকে প্রশ্ন করলে তাদের অভিযোগের কোনো জবাব তিতাস দেয় না বলে জানান।
এম রহমান নামের এক গ্রাহক জানান, গ্যাস বিল দিতে গিয়ে দেখি মিটার ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। আগে ছিল ১০০ টাকা। আমাদের কিছু না জানিয়েই ভাড়া বাড়ানো হলো। এমনিতেই সব কিছুর দাম বেশি।
তার ওপর মিটার ভাড়াও বেশি নেয়া হচ্ছে। এগুলো দেখার কি কেউ নেই দেশে।
প্রিপেইড মিটার স্থাপনের ফলে গ্যাসের অপচয় রোধ হবে এবং গ্রাহকের খরচ কমে যাবে- এমন বিষয় সামনে এনে জাইকা’র সহায়তায় প্রিপেইড মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় তিতাস। ২০১১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। পরে ২০১৭ সালে বাসাবাড়িতে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সে সময় প্রিপেইড মিটার ভাড়া ছিল ৬০ টাকা। ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রিপেইড মিটারের ভাড়া ৬০ থেকে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করেছিল তিতাস। তখনো গোপনে বাড়ানো হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
এ ছাড়া গত জুন থেকে পাইপলাইনে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের পাইকারি দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), যা গত জুন থেকেই কার্যকর রয়েছে। আর প্রিপেইড মিটারে প্রতি ইউনিটের খরচ ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৪৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১৮ টাকা করা হয়। সে সময় একটি প্রিপেইড মিটার ২৫-২৬ হাজার টাকায় কিনতে হয় বলে তিতাসের এমডি জানিয়েছিলেন। সে হিসেবে নতুন গ্রাহকের মিটার ভাড়া ১১ বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ১২তম বছর থেকে কি মিটার ভাড়া থাকবে না?
বর্তমানে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানের জাইকা’র অর্থায়নে দু’টি প্রকল্পে মিটার স্থাপনের কাজ চলমান। জাইকা’র অর্থায়নে বসানো হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার এবং এডিবি’র অর্থায়নে ৮ হাজার ৬০০টি মিটার স্থাপন করা হয়েছে। জাইকা’র অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের আওতায় আরও ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যে একটি প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। জাইকা’র অর্থায়নে আরও ১১ লাখ মিটার স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।
বর্তমানে গ্রাহকদের কাছে তিতাসের ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬০০টি প্রিপেইড মিটার রয়েছে। এর আগে প্রতি মাসে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মিটার ভাড়া চার্জ হিসেবে আদায় করা হতো। নতুন নিয়মে গ্রাহকদের থেকে আরও সমপরিমাণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এতে গ্রাহকের থেকে মিটার ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ৬ কোটি ৫৭ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় হবে তিতাসের।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ‘২০০৩-এর ধারা ২২ (খ) এবং ৩৪ অনুসারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (তিতাস গ্যাস) ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ ও ভোক্তাপর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিষয়ে আগ্রহী পক্ষগণকে গণশুনানি প্রদানপূর্বক বিস্তারিত পর্যালোচনা করে আদেশ দিয়ে থাকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে মিটার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে কিছুই জানে না সংস্থাটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসি’র সদস্য (গ্যাস) ড. মো. হেলাল উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, তিতাস মিটার ভাড়া বাড়িয়েছে কিনা এর সত্যতা আমাদের জানা নেই। আমাদের সঙ্গে তিতাসের কোনো ফাংশনাল সম্পর্ক নেই। বিইআরসি শুধু একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, গ্যাসের বিলের মধ্যেই মিটার চার্জ সমন্বয় করে নেয়ার কথা। কিন্তু তিতাস আলাদাভাবে মিটার চার্জ নিচ্ছে। এটা নেয়ার এখতিয়ার তিতাসের নেই। বিল বাড়ানোর কোনো এখতিয়ারও তিতাসের নেই। মানব জমিন