শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

গণহত্যার নীরব সাক্ষী

মো: আবদুল জলিল: জঘন্য এক গণহত্যার নীরব সাক্ষী আমরা। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত ও কষ্টের বিষয় হচ্ছে গাজায় ইসরাইলী গণহত্যা। বিগত ৭৫ বছর যাবৎ ফিলিস্তিনের ভূমিপুত্র আরব জনগোষ্ঠী বিশেষত মুসলমানদের উপর ইহুদীবাদী ইসরাইলের অব্যাহত দমন-পীড়ন, হত্যা, গণহত্যা আর নির্মুল অভিযান চলছে ফিলিস্তিনে। অবশিষ্ট ভূমি গাজা ও পশ্চিম তীর এলাকাকে ফিলিস্তিনী শূণ্য করার ঘৃণ্য মিশনে রয়েছে ইসরাইল।

২০২৩ সালে অক্টোবরের শুরুতে ইসরাইলে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল হামাস শাসিত গাজায় হামলা শুরু করে। বিগত ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে চলমান গাজা উপত্যাকায় ইসরাইলী ধ্বংসজ্ঞ ইতিহাসের সকল গণহত্যা ও নির্মমতাকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজা উপত্যাকায় প্রায় ২০ লক্ষ ফিলিস্তিনী বসবাস করত। কিন্তু হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নামে বিগত ছয়-সাত মাসের আক্রমনে গাজাকে বলতে গেলে সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইলী দখলদার বাহিনী। গাজা উপত্যাকার পানি, বিদ্যুত, খাবার, ঔষধ সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার শিশু ও বাকী প্রায় সবাই সাধারণ নারী ও পুরুষ। হাসপাতালগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। মসজিদ সহ ধর্মীয় উপাসনালয়সমূহ মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিশ্চিহ্নি করে দেয়া হয়েছে। শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া লাখো ফিলিস্তীনীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। গণকবরে জীবন্ত মানুষকেও কবর দেয়ার তথ্য এসেছে। অর্থাৎ গাজায় ইসরাইলী গণহত্যা ইতিহাসের সকল বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতাকে হার মানিয়েছে। যুদ্ধের সকল নিয়ম-নীতিকে লঙ্ঘন করেছে নেতানিয়াহুর নেতৃত্ত¡াধীন ইসরাইলী বাহিনী। যুদ্ধ ক্ষেত্রে সাধারণ নারী-শিশু হত্যা যুদ্ধাপরাধ। ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক মানুষ হত্যা যুদ্ধাপরাধ। ধর্মীয় উপসানালয় ধবংস করা যুদ্ধাপরাধ। গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ সীমাহীন।

হেগ কনভেনশন অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধ হচ্ছে কোন যুদ্ধ বা সামরিক সংঘাত চলাকালে কোন ব্যক্তি কর্তৃক বেসরকারী জনগণের বিরুদ্ধে সংগঠিত, সমর্থিত ও নির্দিষ্ট সংজ্ঞায়িত অপরাধ কর্মকান্ডসমূহ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসারে যুদ্ধকালীন সংঘাতের সময় বেসরকারী জনগনকে খুন, লুন্ঠন, ধর্ষণ; কারাগারে অন্তরীণ ব্যক্তিকে হত্যা; নগর, বন্দর, হাসপাতাল কোন ধরনের সামরিক উস্কানি ছাড়াই ধ্বংস প্রভৃতি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৮৯৯ ও ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশন সর্বপ্রথম যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আইনসমূহ লিপিবদ্ধ করে।

গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা যুদ্ধাপরাধের প্রচলিত সজ্ঞার চেয়ে ধারণাতীত জঘন্য অপরাধের উদাহরণ। এ যুদ্ধ বন্ধে ইহুদীবাদী ইসরাইল কারো কথায় ভ্রæক্ষেপ করছে না। এখন গাজাবাসীর সর্বশেষ আশ্রয়স্থল রাফা শহরে আক্রমন শুরু করেছে। এ জঘন্য হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশে^র মানবতাবাদী মানুষ প্রতিবাদ করছে। রাস্তায়, ক্যাম্পাসে মিছিল করছে। ইসরাইলে মদদদাতা ইঙ্গ-মার্কিন প্রতিবন্ধকতার পর অবশেষে বিগ ২৬ মার্চ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব পাশ হলেও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল তা শুনছে না।

এমতাবস্থায় ইসরাইলের বর্বরতা ঠেকাতে হলে প্রয়োজন বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষের গণ আন্দোলন। ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ইসরাইলী জঘন্য গণহত্যার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। আমেরিকা জুড়ে চলমান এ ছাত্র আন্দোলনে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরালের এক নম্বর অর্থ-অস্ত্র সরবারহকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভীত নড়ে উঠেছে। মার্কিন সরকার এ প্রতিবাদকে সহ্য করতে পারছে না। প্রতিবাদী ছাত্র-শিক্ষদের উপর জুলুম নির্যাতন চঅরাচ্ছে, গণগ্রেফতার শুরু করেছে। কিন্তু তারপরেও মজলুম ফিলিস্তিনীদের পক্ষের আন্দোলন থামছে না। এ অবস্থায় মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও সর্বস্তরের মানবতাবাদী মানুষদের রাস্তায় নামতে হবে। প্রকাশ্যে বা তলে তলে যারা ইসরাইলের পদলেহন বা তাদের করছে তাদের বিরুদ্ধে গণ বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে। Poetic Justice বলে প্রতিশোধের যে অমোঘ বিধান রয়েছে তা থেকে যদি পৃথিবীবাসী বাঁচতে চাই, কোন মহা বিপর্য য়ের থেকে যদি এ মনুষ্য আবাস ভূমিকে বাঁচাতে চাই তবে মজলুম ফিলিস্তিনীদের পাশে দাঁড়াতে হবে সবাইকে। ভুলে গেলে চলবে না কোভিড-১৯ এ সারাবিশ্বে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ মারা গেছেন (প্রকৃত সংখ্যা এর ৩ গুন হতে পারে)। মজলুমের আর্ত চিৎকার গজব হিসেবে ধরাধামে ফিরে আসলে পূর্ব -পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ কারো রক্ষা নেই। পরিশেষ জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের বিজয় কামনা করছি। গণহত্যা বন্ধ হোক। আল-আকসা মুক্তি পাক। ফ্রম রিভার টু দ্যা সী, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি। জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তীন রাষ্ট্রের বিকল্প নেই।

আরো পড়ুন ...