শনিবার, ৮ই নভেম্বর, ২০২৫
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস সহ ২৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে ঐতিহাসিক এই সনদে স্বাক্ষর করেনি ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। এ ছাড়া স্বাক্ষর করেনি সিপিবিসহ আরো চারটি বাম দল।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর পরবর্তী বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদের ঐক্যের সুর নিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। এ ঐক্য যেন বজায় থাকে। আজকে ঐকমত্যে যেমন আমরা সনদ করলাম, তেমনি রাজনীতির ব্যাপারে, নির্বাচনের ব্যাপারে আপনারা বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা বসে একটা সনদ করেন, কিভাবে নির্বাচন করবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘যেমন-তেমন করে নির্বাচন করলে তো আবার পুরনো জায়গায় ফিরে যাওয়া হলো। তাহলে লাভটা কী হলো? এ কথা লিখে (সনদে) আমার লাভ কী হলো? কথা লিখলাম কিন্তু কথা মানলাম না, কাজের মধ্যে গিয়ে মানলাম না। আমার একটা অনুরোধ আপনারা ঐকমত্য কমিশন বলেন, কমিটি বলেন; নিজেরা বসুন, নির্বাচনটা কিভাবে সুন্দরভাবে করবেন, উৎসবমুখর করবেন।’
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশের এক নতুন জন্ম হয়েছে এবং গণ-অভ্যুত্থানের কারণে এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জাতি আজ এক নবজন্মের সন্ধিক্ষণে। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের কারণে, বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে। তিনি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটিকে সেই অভ্যুত্থানের ‘দ্বিতীয় অংশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
আত্মত্যাগকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্যের শুরুতেই ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন তাদের স্মরণ করেন। একই সাথে যারা আহত হয়েছেন বা কষ্টে আছেন, সেই বীর যোদ্ধাদের প্রতিও তিনি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি উল্লেখ করেন, তাদের আত্মত্যাগের ফলেই আজকের এই দিনটি সম্ভব হয়েছে এবং সারা জাতি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন।
সংবিধান ও সরকার পরিচালনায় পরিবর্তন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সুযোগে জাতি পুরনো ও অপ্রয়োজনীয় আলোচনা (পুরনো কথাবার্তা সব পেছনে ফেলে) বাদ দিয়ে নতুন বিষয়গুলোকে জাতীয় জীবনে নিয়ে এসেছে। এই পরিবর্তনের মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সংবিধানের পরিবর্তন এবং সরকার পরিচালনার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়। তিনি নিশ্চিত করেন, এই পরিবর্তনের ভেতরে অনেক নতুন বিষয় এসেছে।
ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, জুলাই সনদ জাতীয় দলিল হিসেবে তৈরি হয়েছে। তার বাস্তবায়ন দ্রুততার সাথে ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এই দিকনির্দেশনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে। অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, আমাদের যে স্বপ্ন, বাংলাদেশের মানুষের যে আকাক্সক্ষা, তাকে ধারণ করে, তাকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবার একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা, তাতে একটি দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্যই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় এক বছর ধরে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এই জাতীয় সনদে উপনীত হয়েছেন।
তিনি বলেন, জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়। এটি হচ্ছে নাগরিকের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর এবং রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি। এই সামাজিক চুক্তির প্রত্যাশা প্রত্যেকটি বিষয়ের মধ্যে জড়িত আছে। বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামের তাদের কষ্টের তাদের প্রচেষ্টার প্রত্যেকটি বিন্দু যুক্ত আছে। গত বছরের জুলাই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, যারা আজকে আহত আছেন, যে জুলাই যোদ্ধারা আজকেও সামগ্রিকভাবে কষ্টকর জীবনযাপন করছেন, তাদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে। কেননা জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান দীর্ঘদিনের রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে আকাক্সক্ষা তার প্রতিফলন। নয়া দিগন্ত