বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
স্বাগতম হিজরি নববর্ষ ১৪৪৬। রোববার ৭ জুলাই সন্ধ্যা থেকে ১৪৪৬ হিজরি বর্ষ শুরু হবে। এলো নতুন বছর। নতুন দিন। মুমিন মুসলমানরা এদিন জিন্দেগি ও বন্দেগির নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকেন।
অতীতের পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে পবিত্র জীবন লাভের মহান ব্রতে নিমগ্ন হওয়ার শপথ গ্রহণ করেন। কালেমায় বিশ্বাসী প্রতিটি মুসলমানের জন্য নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, শবেবরাত, শবেকদর, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ ধর্মীয় বিষয়াবলির জন্য হিজরি সনের হিসাব অপরিহার্য।
কিন্তু জীবনের প্রাসঙ্গিকতায় ইংরেজি ও বাংলা সনের বিদায় ও বরণে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়-হিজরি সনের বেলায় তা মোটেও লক্ষ করা যায় না। অথচ হিজরি নববর্ষকে গুরুত্বসহকারে পালন করাই ছিল আমাদের মুসলিম অধ্যুষিত দেশের কাম্য।
হিজরি সন গণনার সূচনা হয়েছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনাকে উপলক্ষ্য করে। রাসুল (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই আরবি মহররম মাসকে হিজরি সনের প্রথম মাস ধরে সাল গণনা শুরু হয়।
হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর শাসনামলে ১৬ হিজরি সনে, প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) ইরাক এবং কুফার গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। একবার হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) উমরের (রা.) কাছে এ মর্মে পত্র লিখেন, আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশ সংবলিত যেসব চিঠি আমাদের কাছে পৌঁছে তাতে দিন, মাস, কাল, তারিখ ইত্যাদি না থাকায় কোন চিঠি কোন দিনের তা নিরূপণ করা আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। এতে করে আমাদের নির্দেশ কার্যকর করতে সমস্যা হয়। অনেক সময় আমরা বিব্রত বোধ করি চিঠির ধারাবাহিকতা না পেয়ে।
হজরত আবু মুসা আশআরীর চিঠি পেয়ে হজরত উমর (রা.) এ মর্মে পরামর্শ সভার আহ্বান করেন, এখন থেকে একটি ইসলামি তারিখ প্রবর্তন করতে হবে। ওই পরামর্শ সভায় হজরত উসমান (রা.) হজরত আলী (রা.)সহ বিশিষ্ট অনেক সাহাবি উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত সবার পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে ওমর (রা.) সিদ্ধান্ত দেন হিজরি সন প্রবর্তনের। এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জমাদিউল আউয়াল ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দ।
হিজরি সনের প্রথম মাস হলো মহররম। মহররম একটি তাৎপর্যমণ্ডিত ও বরকতময় মাস। মুসলিম ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কুরআনে কারিমে এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘চারটি মাস রয়েছে যেগুলো সম্মানিত মাস। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো মহররম। (সূরা তাওবাহ : ৩৬)। আর এ মাসেই রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ‘আশুরা’। মহররমের দশম তারিখে ঐতিহাসিক ‘কারবালা’ সংঘটিত হয়েছিল। এ ছাড়াও বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ দিনে ঘটেছে।
মহররমের ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নফল রোজা। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (সা.)কে এ দিন (আশুরার) এবং এ মাসে রমজানের রোজার চেয়ে অন্য কোনো রোজাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি। (মিশকাত শরিফ) রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার বিশ্বাস যে, আশুরার রোজার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা বিগত এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন’। (তিরমিজি শরিফ)।
আরবি হিজরি সালের প্রতিটি মাসই বিশেষভাবে তাৎপর্যমণ্ডিত। হিজরি নববর্ষ আমাদের জীবনে বয়ে আনুক শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণের ফাল্গুধারা। আমিন!