শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
‘বর্তমান শিক্ষানীতি, নতুন শিক্ষাক্রম ও জাতির ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
ঢাকা, ২১ জানুয়ারি ২০২৪: খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ বলেছেন, বর্তমান শিক্ষাক্রমে মূল শিক্ষাকে গণশিক্ষার স্তরে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছে। এই শিক্ষানীতি থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। ভারত এই সরকারের ঘাড়ে ভর দিয়ে আমাদের শিক্ষানীতি দখল করেছে। আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তা নষ্ট করা হয়েছে। অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সামর্থ্যবানদের অনেকে আজ ইংরেজি মাধ্যমে তাদের সন্তানদেরকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। পরীক্ষা না থাকাতে শিক্ষার্থীরা বাসায় পড়াশোনা করে না। মা-বাবার কথা শুনে না। ট্রান্সজেন্ডার ও অবাধ মেলামেশার সংস্কৃতি আমদানি করে মূল্যবোধের ধ্বস নামানো হচ্ছে। আধুনিকতার নামে নৈতিকতা বিসর্জন দেয়ার এ শিক্ষ্যাব্যবস্থা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে এই দেশে অনেকগুলো শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। সেক্যুলার ও নাস্তিকদের হাতে রচিত এসব শিক্ষাক্রমে কোন ইসলামী বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদ ছিলেন না। বর্তমান শিক্ষাক্রম রচনায় ইসলামী শিক্ষাবিদ সহ কোন অংশীজনের সাথে মতবিনিময় করা হয়নি। ভুলত্রæটি পর্যালোচনা না করে বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ভুল পাঠ্যক্রম তুলে দেয়া হয়েছে। একদিকে যেমন দেশের আর্থিক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে অন্যদিকে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পঙ্গু করা হচ্ছে। তাই এই শিক্ষাক্রম বাতিল করতে হবে। নতুনভাবে শিক্ষাক্রম প্রণয়নে বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদ ও আলেমদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড: আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, বর্তমান সরকারের আদর্শ যা, শিক্ষা ব্যবস্থায় তাই প্রতিফলিত হয়েছে। যে সরকার অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় আরোহন করেছে তারা কিভাবে নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে পারে! তাই দলমত নির্বিশেষে সকলকে মাঠে নামতে হবে। এই শিক্ষাক্রম বাতিলে শিক্ষাবিদ, ছাত্রসমাজ ও অভিভাবকদের জাগতে হবে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ ইসলামের আলোকে বিজ্ঞানমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ার আন্দোলন বেগবান করতে হবে।
গতকাল বিকাল ৩টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ‘বর্তমান শিক্ষানীতি, নতুন শিক্ষাক্রম ও জাতির ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে খেলাফত মজলিসের আমির এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব উপরোক্ত বক্তব্যগুলো পেশ করেন।
খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম।
ঢাকা মহানগরী উত্তর সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা সাইফ উদ্দিন আহমদ খন্দকারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে লিখিত প্রবন্ধের উপর আলোচনা পেশ করেন ও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক খালেকুজ্জামান, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মাওলানা জিয়াউল হক শামীম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের নায়েবে আমীর এরশাদুল বারি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন মহাসচিব অধ্যাপক মোস্তফা তারিকুল হাসান, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ড: মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল জলিল, মালিবাগ জামিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুস সালাম, মুফতি জাফর আহমদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আবদুল হক আমিনী, হাফেজ মাওলানা নুরুল হক, আবুল হোসেন, প্রিন্সিপাল মাওলানা আজিজুল হক, আমির আলী হাওলাদার প্রমুখ।
সেমিনারে উপস্থাপিত লিখিত প্রবন্ধ:
বর্তমান শিক্ষানীতি, নতুন শিক্ষাক্রম ও জাতির ভবিষ্যৎ
অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম
সভ্যতার আদি হতে মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো শিক্ষা। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানা অচেনাকে চেনা এবং কাঙ্খিত ভবিষ্যৎ রচনায় ভিত তৈরি হয়। দূর প্রাচীনকাল হতে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মৌলিক চরিত্র গঠন জ্ঞান অর্জন এবং নাগরিক তৈরীর প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসন ২৩ বছরের পাকিস্তানি শাসন এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ অর্ধশতক অতিক্রম করলেও এখন পর্যন্ত এমন কোন শিক্ষানীতি ও পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়নি যা একদিকে জাতির আশা-আকাঙ্খা পূরণ এবং বৈশ্বিক পরিমÐলে তীব্র প্রতিযোগিতায় যোগ্যতমের ঊর্ধ্বতন হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে (ঝঁৎারাধষ ড়ভ ঃযব ভরঃঃবংঃ)। অতিব দুঃখের বিষয় এই যে আমাদের শিক্ষার গতিপথ ক্রমাগত নি¤œমুখী। সা¤প্রতিক সময়ে কোন গবেষণা ছাড়াই ঘনঘন শিক্ষানীতি, পাঠ্যক্রম, পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করা হচ্ছে। শিক্ষার সাথে আবশ্যিকভাবে যুক্ত শিক্ষকমÐলীকে প্রশিক্ষিত না করেই নতুন একটি পদ্ধতি শুরু করা হচ্ছে আবার সেই পদ্ধতি বুঝে ওঠার আগেই তা পরিবর্তন করে আরেকটি পদ্ধতি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিশেষত প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পছন্দমাফিক দু একজন বিশেষজ্ঞের সুপারিশেই প্রচলন করা হচ্ছে। শিক্ষা নিয়ে এই উপুর্যপোরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শিক্ষক, অভিভাবক সচেতন জনসমাজ-সহ সাধারণ মানুষকে উৎকণ্ঠিত করছে।আমরা মূল আলোচনায় যাবার আগে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এপর্যন্ত যতগুলো শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে সেগুলো উপস্থাপনের চেষ্টা করছি।
ব্রিটিশ শাসন আমল ১. লর্ড ম্যাকলে-এর নি¤œগামী পরিস্রবণ নীতি (১৮১৩): ক্ষমতা দখলের প্রায় অর্ধশতক পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম ১৮১৩ সালে সনদ নবায়ন আইনের মাধ্যমে ভারতীয় জনগণের শিক্ষার দায় মেনে নিয়ে বাজেটে বাৎসরিক এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। এতে জনমনে এই বিশ্বাস জন্মে যে, অস্তিত্বের সংগ্রামে ধুঁকতে থাকা দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো প্রাণ ফিরে পাবে।মেকলে ‘নি¤œগামী পরিস্রবণ নীতি’ বা চুইয়ে-পড়া শিক্ষাতত্ত¡ উপস্থাপন করেন। তার মতে উচ্চ শ্রেণির অনুগত কিছু মানুষকে শিক্ষা দেওয়া হবে। এদের থেকে চুইয়ে-পড়া শিক্ষা পরবর্তীতে নিচের মানুষদেরও শিক্ষিত করে তুলবে। মেকলে লেখেন-“ডব সঁংঃ ধঃ ঢ়ৎবংবহঃ ফড় ড়ঁৎ নবংঃ ঃড় ভড়ৎস ধ পষধংং যিড় সধু নব রহঃবৎঢ়ৎবঃবৎং নবঃবিবহ ঁং ধহফ ঃযব সরষষরড়হং যিড়স বি মড়াবৎহ; ধ পষধংং ড়ভ ঢ়বৎংড়হং, ওহফরধহ রহ নষড়ড়ফ ধহফ পড়ষড়ঁৎ, নঁঃ ঊহমষরংয রহ ঃধংঃব, রহ ড়ঢ়রহরড়হং, রহ সড়ৎধষং, ধহফ রহ রহঃবষষবপঃ.”“বর্তমানে এমন একটি শ্রেণি তৈরি করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে যারা আমাদের ও স্থানীয়দের মাঝে দোভাষী হিসেবে কাজ করবে। এরা হবে এমন এক শ্রেণি যারা রক্তে-বর্ণে ভারতীয় হলেও রুচি ও মতাদর্শে হবে ইংরেজ।” কোম্পানি সরকার মেকলের নীতিকে স্বীকৃতি দিয়ে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের পুরোটাই উপর তলার অনুগত একদল ‘দেশী ইংরেজ’ তৈরির কাজে ব্যয় করে। ফলে দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থা অনাদর অবহেলায় ধ্বংসের মুখে পতিত হয়।২.উইলিয়াম অ্যাডাম শিক্ষা কমিশন (১৮৩৫): পর্তুগিজ মিশনারির ফাদার উইলিয়াম এ্যাডাম পরিচালিত দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার ওপর পৃথক তিনটি জরিপ রিপোর্ট কোম্পানির কাছে প্রেরণ করেন। রিপোর্টে তিনি বাংলা ও বিহারের মক্তব, মাদরাসা ও টোল সহ এক লক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য তুলে ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য কোম্পানির নিকট সুপারিশ করলেও মেকলের বিরোধিতায় সে আশার গুড়ে বালি পড়ে।৩. উড-এর ডেসপ্যাচ (১৮৫৪): ১৮৫৪ সালে উডের ডেসপ্যাচ ঘোষণার মাধ্যমে মেকলের নীতি পরিত্যাগ করে জনসাধারণের মাঝে শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ ঘোষণায় দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল করতে পৃষ্ঠপোষকতা দেবার সুপারিশ করা হয়। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে পশ্চিমা শিক্ষার আদলে শিক্ষাকাঠামো প্রণয়নের সুপারিশও হয়। এটিই ছিল বৃটিশ ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন; যা ‘হান্টার কমিশন’ নামে পরিচিত। এই কমিশন শিক্ষাক্রমে পাশ্চাত্যের পাশাপাশি দেশীয় শিক্ষাকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।৪. লর্ড কার্জন-এর শিক্ষা সংস্কার সম্মেলন (১৯০১): অবশ্য ঔপনিবেশিক আমলে লর্ড কার্জন শিক্ষা উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে বেশ গুরুত্বের দাবী রাখে। তিনি ১৯০১ সালে শিমলা সম্মেলন থেকে প্রাথমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সংস্কার ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। স্বীকৃতি দেন শিক্ষাদানে মাতৃভাষার ব্যবহার। এই পরিকল্পনাও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।৫. মাইকেল স্যাডলার কমিশন (১৯১৭): ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান কার্যক্রম পর্যালোচনা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে ড. মাইকেল স্যাডলরের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কমিশন সরকারকে বিভিন্ন প্রস্তাবের পাশাপাশি পূর্ব বাংলায় শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ঢাকায় একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন যার প্রতিফলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ৬. সার্জেন্ট কমিশন (১৯৪৪): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ১৯৪৪ সালে জন সার্জেন্টের নেতৃত্বে ৪০ বছর মেয়াদী একটি শিক্ষা পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এতে ৬ বছরের কমবয়সী শিশুদের নার্সারি স্কুল এবং ৬-১৪ বছর বয়সীদের জন্য অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার সুপারিশ করলেও রিপোর্ট বাস্তবায়নের পূর্বেই ভারতবর্ষ ভেঙ্গে পাকিস্তান ও ভারত নামে দু’টি পৃথক স্বাধীন ও রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
পাকিস্তান শাসনামল১৯৪৭ সালে করাচিতে পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষা অধিবেশনে ইসলামি মূল্যবোধকে শিক্ষার মূল চেতনা ধরে নেওয়া হয়।এই অধিবেশনেই কয়েকটি মৌলিক বিষয় ছাড়া প্রাদেশিক সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয়। ১. মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ শিক্ষা কমিশন (১৯৪৯): পূর্বপাকিস্তানে মাওলানা আকরাম খাঁর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয় এবং কমিশন ১৯৫২ সালে রিপোর্ট পেশ করে। এতে প্রাথমিক শিক্ষাকে সার্বজনীন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবনা-সহ বেশকিছু সুপারিশ করা হয়। যার অধিকাংশ পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হয়। এই কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৫২ তে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১০ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা অনুসারে প্রতি বছর গ্রামাঞ্চলগুলোতে ২৫০০ টি করে ১০ বছরে মোট ২৫০০০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু হয়। এ বছরই পূর্বপাকিস্তানে ৫০৫৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও প্রতিষ্ঠা পায় এবং পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষাক্রম চালু হয়।২. আতাউর রহমান খান শিক্ষা কমিশন (১৯৫৪): ১৯৫৪ সালে পূর্বপাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কমিশন ৬-১৫ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করে। ৩. এসএম শরীফ শিক্ষা কমিশন (১৯৫৮): আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসার পর ১৯৫৮ সালে এম. এ. শরিফের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। যার দায়িত্ব ছিল জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি করা এবং প্রয়োজনীয় কর্মপন্থার সুপারিশ করা। শরিফ কমিশন শিক্ষাকে মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে উল্লেখ করে। ৪. হামুদুর রহমান ছাত্র সমস্যা ও ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক কমিশন (১৯৬৪): ১৯৬৪ সালে বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠিত হয়। হামুদুর রহমান কমিশনের মূল দায়িত্ব ছিল ছাত্রদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা এবং ছাত্রদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা সুপারিশ করা। ৫. নূর খান শিক্ষা কমিশন (১৯৬৯): ১৯৬৯ এ আইয়ুব খানের পতনের পর এয়ার মর্শাল নুর খানের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কমিশন শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষাকে কর্মমুখী করা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা ও সুপারিশমালা পেশ করে। কিন্তু পূর্বপাকিস্তানের শিক্ষা উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকার কখনোই আন্তরিক ছিল না। উপরন্তু তাদের ধারাবাহিক বৈষম্য ও বিমাতাসূলভ আচরণ বাংলার আপামর জনসাধারণকে জাগিয়ে তোলে, গড়ে ওঠে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ফলে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ ১. জাতীয় শিক্ষা কমিশন (১৯৭২): শিক্ষাকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য উপযোগী ও উন্নয়নমুখী করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে শিক্ষাবিদ ড. কুদরত-এ-খুদার নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কমিশন ১৯৭৪ সালে তাদের রিপোর্ট দাখিল করে। বাংলাদেশের নতুন প্রণীত সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়। এই রিপোর্টের বড়ো দুর্বলতা হলো- কমিশন এদেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভ‚তিকে পাশ কাটিয়ে উল্টো পথে চলে। তারা শিক্ষানীতিতে ধর্ম, ধর্মীয় শিক্ষা ও বিশেষত ইসলামের প্রতি অশ্রদ্ধা রেখে রিপোর্ট প্রণয়ন করে। মূলত ইসলামি আদর্শ বিরোধী নৈতিকতাহীন এক কালো শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি করে কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন। যার বিষফল পরবর্তী প্রতিটি শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রমকে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করে।[১]২. জাতীয় কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন কমিটি (১৯৭৬): কুদরত-এ-খুদা কমিশনের সুপারিশের আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও সিলেবাস প্রণয়নের জন্য প্রফেসর শামসুল হুদাকে প্রধান করে ১৯৭৬ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ৫১ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সমন্বয়ে গঠিত এই জাতীয় কমিটি মার্চ মাসে এর কার্যক্রম শুরু করে। লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কমিটি দশটি সাব-কমিটি ও ২৭টি সাবজেক্ট কমিটি গঠন করে। কমিটি ১৯৭৬, ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে সাত খÐে এর সুপারিশ সরকারের নিকট পেশ করে। কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে একমুখী ও সমরূপ মাধ্যমিক শিক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তন এবং ১৯৮০ সালের স্কুল সেশন থেকে নবম শ্রেণি স্তরে এই পদ্ধতি চালু করার সুপারিশ করে।৩. জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি (১৯৭৮): ১৯৭৮ সালে সরকার কুদরত-এ-খুদা কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা এবং শিক্ষার সমস্যাবলি নতুনভাবে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে একটি উপদেষ্টা কমিটি নিয়োগ দেওয়া হয়। এই কমিটি ১৯৭৯ সালে ‘অন্তর্র্বতীকালীন শিক্ষানীতি সুপারিশ’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে দেশে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। রিপোর্টে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রচলিত কাঠামোকে তিনটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা হয়, নি¤œ মাধ্যমিক ৩ বছর, মাধ্যমিক ২ বছর এবং উচ্চ মাধ্যমিক ২ বছর।৪. মজিদ খান শিক্ষা কমিশন (১৯৮৩): ১৯৮৩ সালে মজিদ খান শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু এই কমিশনের রিপোর্ট ব্যাপকভাবে প্রচার লাভ করেনি এবং তা বাস্তবায়নের কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্যোগও নেয়া হয়নি।৫. মফিজউদ্দীন আহমদ শিক্ষা কমিশন (১৯৮৭): ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর মফিজউদ্দিন আহমদকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। চেয়ারম্যানের নামানুসারে এটি মফিজউদ্দিন শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিতি লাভ করে। কমিশন ১৯৮৮ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি সরকারের নিকট রিপোর্ট পেশ করে।৬. শামসুল হক কমিশন (১৯৯৭): ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এম. শামসুল হককে চেয়ারম্যান করে ৫৬ সদস্যের একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিটির রিপোর্টের আলোকেই পাশ হয় ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০০’। ৭. এম এ বারী শিক্ষা কমিশন (২০০১): শিক্ষা খাতের অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার শনাক্ত করতে ২০০১ সালে ডঃ এম আব্দুল বারীর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়। কমিটি ২০০২ সালে বেশ কয়েকটি বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুপারিশ-সহ রিপোর্ট জমা দেয়। ৮. মো. মনিরুজ্জামান মিয়া কমিশন : বারী শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের উপায় বের করা ছিল যার উদ্দেশ্য। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে এই কমিশন সরকারের কাছে রিপোর্ট প্রদান করে। সাধারণ শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা, বিশেষায়িত শিক্ষা- তিন ভাগে বিভক্ত এই রিপোর্টে সর্বমোট ৮৮০ টি সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। ৭. কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন (২০০৯): জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০০ হালনাগাদ করার জন্য সরকার ২০০৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি ১৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটি কুদরত-ই-খুদা কমিশনের রিপোর্টের ১৯৭৪ এবং শামসুল হক শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ১৯৯৭এর আলোকে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। কমিশন ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ নামে একটি খসড়া সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করেন এবং সরকার তা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবের প্রতিফলন ঘটে। এ শিক্ষানীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আদর্শিক নৈতিকতা থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দূরে রেখে ধর্মবিবর্জিত ‘ইহ-জাগতিক রাজনৈতিক পরিমÐল’ তৈরির উপযোগী জনবল সৃষ্টি। এই শিক্ষানীতি অনুসারে ২০১৩ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বইয়ের নাম পরিবর্তন করে নাম দেয়া হয় ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’। অথচ অন্য কোনো ধর্ম শিক্ষা বইতে এ রকম নাম দেয়া হয়নি। এখানে প্রচ্ছন্নভাবে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ দুটো নামের মাঝখানে ‘ও’ নামক অব্যয় বসিয়ে দুটো ভিন্ন জিনিস বুঝিয়েছেন। এই সাথে ইসলাম ও নৈতিকতার মধ্যে প্রচ্ছন্ন বৈসাদৃশ্য সৃষ্টির কারসাজি করে ইসলামি শিক্ষা নিয়ে তাদের বৈরী মনোভাবের প্রকাশই ঘটালেন।২০৪১ সাল পর্যন্ত শিক্ষার একটি রূপকল্প নিয়ে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন এনে পাশ হয় নতুন শিক্ষানীতি-২০২২। এতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তি করে এসএসসি এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা নিয়ে দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে এখন থেকে শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বে অর্থাৎ বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক নামে কোনো বিভাগ থাকবে না। শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিভাজন হবে একাদশ শ্রেণিতে।নতুন এই শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত- ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকেরাই শেখাবেন। ষড়যন্ত্রকারীদের চূড়ান্ত পদক্ষেপ ছিল ধর্মীয় শিক্ষাকে পাঠ্যসূচি থেকে স্থায়ীভাবে বাদ দেয়া। এ পর্যায়ে এসে তারা সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শতভাগ সফল হয়। বর্তমানে ২০২২ সালের নতুন শিক্ষাক্রমের সিলেবাস থেকে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’কেও বাদ দিয়ে তবেই ক্ষান্ত হয়।একটি জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে সে জাতির সমাজ-সংস্কৃতি, বোধ-বিশ্বাস এবং বাস্তবতা ও প্রয়োজনবোধের ওপর ভিত্তি করে। তবেই সে শিক্ষাব্যবস্থা জাতির জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির আদর্শ সোপান হিসেবে কাজে আসে। পক্ষান্তরে স্বজাতির প্রয়োজন ও বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় ভিন্ন কোন জাতির অনুকরণ করা এবং জাতে ওঠার কসরত চালিয়ে যাওয়া— হীনমন্যতা ও মানসিক দাসত্বেরই প্রকাশ ঘটে। এ ধরনের শিক্ষা জাতির বৃহৎ কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আমরা আশ্চর্যভাবে লক্ষ করছি, দুইশো বছর পূর্বে লর্ড মেকলে সহ বিদেশি ইংরেজরা যা করতে পারেননি স্বাধীনতা পর ‘দেশীয় ইংরেজরা’ সেই কাজ করে দেখালেন সফলভাবে। কিন্তু চরম সত্য হল, জাতির বাস্তবতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে আমলে নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় সংশোধনী না আনলে সেদিন বেশি দূরে নয় যখন ধর্ম, জীবন ও সমাজবিমুখ একটি প্রজন্ম তৈরি হবে। যারা জাতির ধ্বংস ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা (সংক্ষিপ্ত) -২০২৩২০২২ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে ৬২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলট প্রকল্পের অংশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ করা হয়। ২০২৩ সালে ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। এরপর ২০২৪ সালে ৩য়, ৪র্থ, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে চালু হয়েছে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।মূল্যায়ন প্রক্রিয়া:মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রম বিষয়ে যষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন বছর শেষে পরীক্ষা ৪০ শতাংশ। বাকি বিষয়ে জীবন ও জীবিকা, তথ্য প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি প্রভৃতিতে। বিদ্যমান বিষয়ে চারু ও কারুকলায় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। আর নবম – দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন (বছর শেষে পরীক্ষা) ৫০ শতাংশ। নবম – দশম শ্রেণির বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। ফলে এই সব শ্রেণিতে ৫ টি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে এবং বাকি বিষয়ের মূল্যায়ন করবে শিক্ষকরা।নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। শতভাগ মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়ন হবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে। নতুন শিক্ষাক্রমে এখনকার মতো আর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না, শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুইটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুই পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। সাময়িক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। জিপিএ পদ্ধতি উঠে যাবে। ১ম, ২য়, ৩য় ইত্যাদি স্থান থাকবে না। প্রারম্ভিক, অন্তবর্তী বা মাধ্যমিক এবং পারদর্শী এ তিনটি গ্রেডে ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি চিহ্ন দিয়ে ফলাফল হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে যা আছেনতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক স্তর, অর্থাৎ নার্সারি ও প্লে-তে শিশুদের জন্য এখন আর কোনও বই থাকবে না। শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষকরাই তাদেরকে সরাসরি শেখাবেন।এরপর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তাদেরকে মাত্র তিনটি বই পড়ানো হবে। এছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে এখন থেকে শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বে। শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক। বাণিজ্য বিভাগে পড়বে, সেই বিভাজন হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যে ১০ বিষয়ে পড়ানো হবে, সেগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। সমস্যা সীমাবদ্ধতা ও শঙ্কা ১. আমাদের দেশে নতুন কোন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয় তখন কিছু উচ্চাশার কথাও বলা হয়। এই অতি আশাবাদ প্রকাশের রোগ শিক্ষা রাজনীতি অর্থনীতি সকল ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। সৃজনশীল পদ্ধতি যখন প্রণয়ন প্রবর্তন করা তখন বলা হয়েছিল- ক. মুখস্ত নির্ভরতা কমবে খ. কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হবে গ. সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে ঘ. নোট গাইড বন্ধ হবে ঙ. শিক্ষার্থীর অনুধাবন ও বিশ্লেষণী দক্ষতা বাড়বে ইত্যাদি।কিন্তু রূঢ় বাস্তবতা হলো এর কোনটাই অর্জিত তো হয়ইনি উপরন্তু নির্ভরতা আরো বেড়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীগণ এ যুগের। পুরাতন যুগের মুখস্ত নির্ভর বিদ্যায় শিক্ষিত আমলা ও বিশেষজ্ঞদের চেয়ে এরা মেধা ও সৃজনশীলতায় কয়েক ধাপ এগিয়ে। তাই পÐিতেরা যখন বলেন ‘মুখস্ত নির্ভরতার পরিবর্তে’ আমাদের শিক্ষার্থীরা বুঝে পড়বে তখন পড়াশোনার পরিবর্তে ভিন্ন কিছু দেখা যায়। সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের উত্তরে যখন চারটি স্তরে প্রশ্ন বিভাজিত, তখন শিক্ষার্থীগণ উদ্দীপকটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখে দিয়েই ৮০% মার্ক পেয়ে পরীক্ষা বৈতরণী পার হয়ে ও’স এচঅ ৫ বলে। আগে নবম শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের মধ্য থেকে পছন্দমতো যেকোনও একটি বিভাগ বেছে নিতে পারতো। কিন্তু এখন দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সবাইকে একটি অভিন্ন সিলেবাসে পড়ানো হবে।
যা বলা দরকারবলা হচ্ছে জীবনমূখী শিক্ষাকে, যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে আচরণিক উদ্দেশ্য বা শিখনফল কেন্দ্রিক নয়। মূখস্ত বিদ্যা কিংবা চাপে পড়ে নয়, বাচ্চারা আনন্দের সঙ্গে শিখবে। দক্ষতা, সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গী শেখানো হবে। তবে একটি জাতীয় শিক্ষাক্রম বিতর্কিত থাকতে পারেনা। এ শিক্ষাক্রমে বেশকিছু ভুল, বিকৃত ও বিতর্কিত বিষয় স্থান পেয়েছে। শিক্ষার পরিকল্পনা, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরীক্ষাপদ্ধতিতে যা খুশি তা-ই করার বাড়াবাড়ি দেখে মনে হচ্ছে, শিশুদের কল্যাণ-অকল্যাণের বিষয়গুলো অনুধাবন করা হয়নি। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে এর প্রমান নেই। একদিকে বিবর্তনের মত অবাস্তব তত্ত¡ আর অন্যদিকে বিজ্ঞান বিষয়ের সংকোচন উল্টো বার্তা দেয়। পাশাপাশি একই দেশে ইংরেজি মাধ্যমে যারা পড়বে তারা সব বিষয়ে অধিক পড়বে এবং অধিক জানবে। ফলে এক দেশে দুই মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মাঝে বড় ধরণের ভারসাম্যহীনতা তৈরী করবে। আমাদের মূল শিক্ষাক্রম কারিগরি শিক্ষায় নামিয়ে আনা হয়েছে। মৌলিক বিজ্ঞান বলা যায় ১০% এ নেমে এসেছে। আইটি, প্রযুক্তি, কারিগরি ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা বড়জোর দক্ষ কর্মী হবো। কিন্তু কোনভাবেই উদ্ভাবনী জাতিতে পরিণত হতে পারব না। বিজ্ঞান শেখার আগে আইটি, প্রযুক্তি ইত্যাদি কর্মমুখী শিক্ষা দেওয়া মূলত কারিগরি শিক্ষাক্রমের কাজ। মূলস্রোতকে এর ভিতর আবদ্ধ করা দূরদ্ৃিষ্টর পরিচায়ক নয়।জাতীয় শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য ছিল ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ও ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা ও তাদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্মবোধ জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলীর যেমন- ন্যায়বোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা বোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃঙ্খলা, সৎ জীবনযাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ, অধ্যবসায় ইত্যাদির বিকাশ ঘটানো। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী গঠনে ইসলাম সহায়তা করে। অন্ধত্ব ও কুসস্কারকে ইসলাম প্রতিরোধ করেছে। মূলত জ্ঞানের শূণ্যতার কারনে কেউ কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে বললেও সার্বিক বিবেচনায় ধর্মই হচ্ছে শিক্ষাকে পূর্ণাঙ্গ করার মাধ্যম। নৈতিক ও জবাবদিহীতামূলক প্রজন্ম গড়তে ধর্মীয় আদর্শের কোন ভিত্তি চিন্তা করা হয়নি। সামগ্রীক কোনো জীবনদর্শনের প্রতিফলন শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যসূচীতে নেই। তার উপর ঘোষিত নীতির ছাপও সিলেবাসে পড়েনি। শধু মুসলমানদের সন্তানই নয়, হিন্দু, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ প্রতিটি শিক্ষার্থীরই তার ধর্ম কর্ম সম্পর্কে জানার ও শিখার অধিকার আছে। ধর্মীয় বিষয়ে সেশন সংখ্যা অর্ধেক কওে দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা না থাকলে ধর্ম পাঠ কতটুকু গুরুত্ব পাবে তা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। আবার বিষয় শিক্ষক চাইলে হাতে কলমে শিক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মসজিদ/ মন্দিরে পাঠাতে পারেন। তখন দেখা যাবে নতুন আলোচনার জন্ম হবে।২০২৩ সালের পাঠ্যপুস্তকে দেখেছি অনেক ভুল। (২০২৪ সালের পাঠ্যপুস্তক যাচাই কনা সম্ভব হয়নি) তখন ৩টি বিষয়ে ৯টি ভুল হয়েছে মর্মে এনসিটিবি স্বীকার করেছিলো। যেমন দশম শ্রেণীর ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ে ২৬ মার্চে (যা হবে ২৫ মার্চ) গণহত্যা শুরু হয়েছে, ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে শপথ পড়ান বিচারপতি আবুসাদাত মো সায়েম(হবে রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী) ইত্যাদি। ওয়েবসাইটে সেসব সংশোধনী দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ভুল আছে যেমন যুক্তফ্রন্টে ৪টি দলের কথা বলা, খেলাফতে রাব্বানী পার্টির নাম বাদ দেয়া। ৫ম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ে দেখানো হয়েছে ৮০ ভাগ মানুষ কৃষিকাজ করে(মন্ত্রণালয়ের তথ্য হচ্ছে ৪০ভাগ), জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান ২০ ভাগ (মন্ত্রণালয় তথ্য হচ্ছে ১১.১২) অথচ ১০ম শ্রেণির বইয়ে লেখা হয়েছে ১১.১২ ভাগ। অষ্টম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইয়ে দেশের ভয়াবহ বন্যার সালগুলো উল্লেখ থাকলেও ১৯৮৭, ২০০০, ২০০৭ ও ২০১৭ সালের বন্যার খবর নেই। একাধিক বইয়ে বখতিয়ার খলজী অসংখ্য বিহার ও লাইব্রেরি ধ্বংস করেছেন’Ñ দখল করেছেন এজাতীয় লিখা হয়েছে। কোনো নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক সোর্সই এ ধরণের কথার সত্যতা প্রমান করে না। অষ্টম শ্রেণির জন্য নির্ধারিত ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইয়ে ১২৪ পৃষ্ঠায় আদিবাসীদের উৎসবের পরচিয় দিতে লেখা হয়েছে- ‘নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার জন্য পালিত পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষদ্র নৃগোষ্ঠীদের বৈসাবি বা বিজুর বাঙালির পহেলা বৈশাখ আজ একই বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। নতুন ধান মাড়াইয়ে বাঙালির নবান্ন আর ক্ষুদ্র নৃগাষ্ঠীর ওয়ানগালা একই সূত্রে গ্রোথিত।’ প্রথমত, বৈসাবি আর বিজু একই বিষয় নয়। বৈসাবি হলো বৈসু (ত্রিপুরাদের), সাংরাই (মার্মাদের) আর বিজুর (চাকমা) সংক্ষিপ্ত রূপ। সেটি কোনোভাবেই শুধু বিজুকে বোঝায় না। আর ওয়ানগালা শুধু মান্দিদের উৎসব, সব নৃগোষ্ঠীর নয়। ‘সংস্কৃতি’তে সাবহেডে লেখা হয়েছে ‘বর্তমানে নৃগোষ্ঠীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছদ, অলংকার এবং খাদ্যাভ্যাসে বাঙালিদের পোশাক (শার্ট, প্যান্ট, থ্রি-পিস), অলংকার (ইমিটেশন) এবং খাদ্যাভ্যাস (ভাত, মাছ, কোমল পানীয়) ইত্যাদি নিজেদের জীবনে ধারণ করেছে।’ শার্ট, প্যান্ট, থ্রি-পিস, অলংকার (ইমিটেশন) বাঙালিদের পোশাক? আর কোমল পানীয় বাঙালির খাবার? ভুল, তথ্য গরমিল আর হাল নাগাদ তথ্য না দিতে পারা একটি বড় ব্যর্থতা। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বলেছিলো, অভিযুক্ত লেখকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে শরিফা গল্প সমকামীতার উপজীব্য। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটি মারাত্মকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আর্যদের ভয়ঙ্কর বর্ণভেদ প্রথার প্রশংসা করা হয়েছে। বিশেষ করে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সাম্প্রদায়িকতার সুসস্পষ্ট ছাপ আছে প্রচ্ছদে, ছবিতে এবং লেখায়। সুলতানী আমলকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা লুকানো হয়নি। ইসলামী ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ¤øান করে দেয়ার চেষ্টাও লক্ষ্যণীয়। হিজাবের বিরুদ্ধে কল্পিত গল্প ফাঁদা হয়েছে। ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে তথাকথিত বিবর্তনবাদকে চাতুর্যতার সাথে উপস্থাপন করা হয়েছে। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতার আলোচনা আসাটি খুবই স্বাভাবিক। তাদেও চুলচেরা বর্ণনা এসেছে, তারা বেদের অনুসারি ছিলেন এবং বেদের প্রকারভেদ নিয়েও রীতিমত আলোচনা এসেছে। এটি মোটেই প্রাসঙ্গিক নয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে বয়:সন্ধির নির্লজ্জ উপস্থাপনা এত ছোটদের অনুধাবন স্তরের সাথে জুলুমই বটে।যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণা না করে এসব করা হয়েছে তা দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের কথা থেকে পাওয়া যায়। টেক্সটবুক একমাত্র উপকরণ নয়, এখন অবারিত তথ্য প্রবাহে সবাই প্রবেশ করতে পারে। পাঠ্যবইয়ে ভুল তথ্য, ইতিহাসের বিকৃতি শিক্ষার্থীরা সহজেই ধরতে পারে। অথচ বাধ্য হয়ে তাদের টেক্সটবুক অনুসরণ করে উত্তর লিখতে হবে। আবার ভুল লেখে কেউ নাম্বার পাবে এবং সঠিক লিখে নাম্বার পাবেনা। এভাবে সীমাবদ্ধতার মাঝে একটি হীনমন্য জাতি তৈরী হবে।মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অপরিকল্পিতভাবে ঘন ঘন সিলেবাস পরিবর্তন, মূল্যায়ন পদ্ধতির গবেষণাহীন প্রয়োগ, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের সমন্বয়হীনতা, শিক্ষকদের বিদ্যমান জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় না নিয়ে পাঠ্যপুস্তকের লেআউট ও শিক্ষার্থীদের অনুধাবন স্তরের বিপরীতে বিষয় বস্তু সাজানো, বিজ্ঞান বিষয়ের সংকোচন, শহর ও গ্রামে শিক্ষার পরিবেশের ভিন্নতা শিক্ষায় বড় ধরণের বৈপরীত্য ও সংকট তৈরী করেছে।আমাদের শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনি¤œ। মাথাপিছু শিক্ষাব্যয়ে আছে মারাত্মক বৈষম্য। বাংলাদেশে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করে পরিবার। শিক্ষা উপকরণের বারবার মূল্যবৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্থ করছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘গেøাবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোটং-২০২২’ প্রকাশিত হয়েছে গত ৩ জানুয়ারি ২০২৩। ইউনেস্কো বলছে- করোনা মহামারীর পর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় শিক্ষার ব্যয় বেড়েছে, ফলে অনেক পরিবার সন্তানের শিক্ষার খরচ জোগাতে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। প্রাইভেট টিউশন, শিক্ষা উপকরণসহ শিক্ষাসংক্রান্ত খরচগুলো সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একই। ফলে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে এটি অনেক পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা হচ্ছে কোচিং ব্যয় কমে যাবে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা সবাই বহন করতে পারবে না। কোচিং না করেও থাকা যায়, জিনিষপত্র তৈরি করা, খাবার নিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন সাজ গোজ করা ইত্যাদি যেসব অর্পিত কাজ দেয়া হবে এর সাথে বাজেট জড়িত। এগুলো না করে থাকা যাবে না। কারন এতে প্রায় ৬০ শতাংশ নাম্বার। ফিনল্যান্ডের উদাহরণ দেয়া হচ্ছে, সেখানে শিক্ষার্থীরা এসাইনমেন্ট করে লাইব্রেরীতে গিয়ে, স্মার্ট ডিভাইস দিয়ে নয়। আর যা দেয়া হয় কম্পিউটার গেইমস, গেইমিং ডিভাইস তা সকলের হাতে দেয়া হয় শিক্ষকের সামনে। সেখানে জুতো খুলে সবাই ক্লাসরুমে প্রবেশ করে। ক্লাসের ফাঁকে অবসরের ব্যবস্থা আছে। ক্লাস শেষে সেখানে বসেই বাড়ির কাজ শেষ করে। একজন শিক্ষকের অধীনে একজন শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন থাকে। ক্লাস রুম সাইজ ১৫-২০ জন। ৭- ১৬ বছর শিক্ষা ফ্রি, কোনো ফি নেয়া হয় না। শিক্ষকের বেতন অন্য সব পেশার চেয়ে বেশি। আমাদের সকল স্কুল/মাদ্রাসার সে সামর্থ আছে? ফিনল্যান্ডের মানুষের মাথাপিছু আয় ৩৪,৮১৯ ডলার। আমাদের ২,৭৬৫ ডলার। কফি শপ, রেস্টুরেন্ট, পিঠা বিক্রেতা ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্যোগ শিক্ষার্থীরা অর্পিত কাজ হিসেবে করে দেখায়। এর স্পন্সরও থাকে। সেখানকার আবহাওয়া, জলবায়ু এমনকি দিন-রাতের পরিবর্তনও আমাদের মতো নয়। বেকারদের রাষ্ট্র সহযোগিতা করে। এসব বিষয় বিবেচনার দাবি রাখে। এসব বড় গুলো না পেরে আপনি দিচ্ছেন ডিম ভাজা, হাসঁ- ব্যাঙ ইত্যাদির মতো লাফানো আরো অনেক বিষয়াদি যা কিনা সৃজনশীলতা তৈরী করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উপানুষ্ঠানিক ও কো কারিকুলার কার্যক্রমগুলোকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মূল উপজীব্য বানিয়ে দেয়া মোটেই ভালো কিছু হয়নি।নবম- দশম শ্রেণীতে ব্যবহারিক নম্বরের শিখনকালীন মূল্যায়ন আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে এসেছি। খরচ করলে ২৫ এ ২৫ পাওয়া যেতো কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। খাতা আঁকা ও লেখার আলাদা একটা পেশা শুরু হয়েছে। আবার ফ্রি ল্যান্সিং এর বড় একটি জায়গা এসাইনমেন্ট রেডি করে দেয়া সারা দুনিয়ায় চলছ্।ে এমন অবস্থায় যখন শুনি কোচিং বা এ জাতীয় জিনিষ বন্ধ হবে তখন দেখি একই কাজে ঢুকছি ডিজিটাল পদ্ধতিতে। অন্যদিকে এসব কাজ এখন মা বাবা ভাই-বোনরাই করে দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীর খবরও নেই। সামনে পেশাদার ব্যক্তিবর্গ দাঁড়িয়ে যাবেন। সুতরাং শেডো এডুকেশন বন্ধ হ”েছনা। দলীয় কাজের উসিলায় ছেলে মেয়েদের মধ্যে ইন্টারেকশন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী হবে। বাবা- মা চাইলেও এসব নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন না। এটি আবেগিক বিকাশকে ভ‚ল পথে পরিচালিত করার সম্ভাবনাই বেশি।রাজনৈতিক বিবেচনা কিংবা দুর্নীতির মাধ্যমে অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব, শিখন ও শিক্ষণ পদ্ধতির অস্পষ্টতা শিক্ষা প্রশাসনে অদক্ষতার জোয়ার এনেছে। বিশেষ করে সরকারী স্কুলগুলে তে বিভিন্ন পরীক্ষা বা অপরাপর কারণে বছরের বড় একটি সময় একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।আমরা বিগত সময়ে জিপিএ এসএসসিতে ৫ প্রাপÍ শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের অবস্থা দেখেছি। কারো কারো তা অষ্টম শেণির উপযোগিও নয়। অস্টম শেণির শিক্ষার্থী যদি নিজে নিজে নবম শ্রেনির পাঠ ধরতে না পারে অথবা ৫ম শেণির শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শেণিতে গিয়ে পাঠ বুঝতে না পাওে তাতে বুঝা যায় জ্ঞানের স্থানান্তর হচ্ছেনা। একই অবস্থা শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্মক্ষেত্রে গিয়েও হয়। যদিও বলা হচ্ছে এবারের শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষত্রের উপযোগি হয়ে উঠবে।
আমাদের সুপারিশএক. আল্লাহপাকের দেওয়া বিধানের আলোকে সামগ্রিকভাবে শিক্ষাক্রম তৈরী করা। এতে করে শিক্ষার সকল পর্যায়ে নৈতিকভাবে শক্তিশালী, সৎ, দক্ষ ও মানবিক মানুষ গড়ে উঠবে। মানুষ যাতে আল্লাহর বান্দা ও খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পালনের উপযোগি হতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষায় কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করুন। স্ব স্ব ধর্মে সকলের পাঠদান এবং যথাযথ মূল্যায়নের ব্যবস্থা করুন। একমূখী শিক্ষার কথা অনেকেই বলেন কিন্তু কোনোভাবেই ধর্মহীন করে নয়। মাদ্রাসা শিক্ষার স্বাতন্ত্রকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে। অভিভাবকদের উদ্বেগ দূর করুন, তাদের সন্তানরা ছন্নছড়া হবে না, নৈতিকতা শিখবে, সৃষ্টিকর্তাকে চিনবে, প্রতারিত হবে না।দুই. বিষয়ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষাবিদ, শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী, আলেম, পেশাজীবী, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক ও মেধাবী শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের শেখার স্তরের সাথে সামঞ্জস্য করা নিশ্চিত করতে হবে। দেশপ্রেম, মানবতাবোধ, সুনাগরিক হওয়া ইত্যাদি যাতে শিক্ষার্থীদের মজ্জাগত হয়। শ্রেণি পারদর্শিতার মূল্যায়ন ৬০ শতাংশের পরিবর্তে ৪০ শতাংশ হতে পারে। শিখনকালীণ মূল্যায়নে শিক্ষার্থীর আদব- আখলাক, আচরণ, এমনকি পরিবারে তার আচরণ এগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। এসব মূল্যায়নে অভিভাবকের কিছুটা অংশগ্রহণ থাকতে পারে। এজন্য সর্ব পর্যায়ে শিক্ষক -অভিভাবক যৌথ সভা অপরিহার্য। না হয় শিক্ষকদের দুর্বিনীত হওয়ার সুযোগ আছে। আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা কমিটি কেন চালু হলো? কেন ২য় পরীক্ষক আর ৩য় পরীক্ষকে যেতে হলো? এটি আমাদের দেশের বাস্তবতা, এক শিক্ষকের উপর এক বিষয়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারিনি।তিন. শিক্ষায় মোট জিডিপির ৫% বরাদ্ধ করা এবং দক্ষতার সাথে বৈষম্যমুক্তভাবে শিক্ষার বরাদ্দ বন্টনের ব্যবস্থা করা। সকল শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। অর্থেও অভাবে যাতে কারো শিক্ষা জীবন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করা। অর্পিত কাজসমূহের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ দেয়া এবং প্রতিষ্ঠানেই এসব কাজ শেষ করা। ডিভাইস নির্ভরতা কমিয়ে লাইব্রেরী নির্ভরতা বাড়াতে হবে।চার. যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা, মেধাবী যুবকদের শিক্ষা পেশায় আনতে হবে। উপযুক্ত ও যোগ্য শিক্ষক দুর্নীতির কাছে যেন হেরে না যান। শিক্ষকদের বেতন তেমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাতে মেধাবী ও সৎ মানুষদের ১ম পছন্দ হয় শিক্ষকতা।পাঁচ. শেখার দক্ষতা উন্নত করা ও শিক্ষকদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের আওতায় রাখা। এমনকি অভিভাবকদেরও প্রশিক্ষণ দরকার। শিশুদের শেখার ক্ষেত্রে পিতামাতা, পরিবার এবং সমাজের ভ‚মিকাকে শক্তিশালীকরণ।ছয়. শিক্ষার্থীদের শেখার মূল্যায়ন যাতে শিক্ষার্থীদের শেখার স্তর এবং নির্দিষ্ট চাহিদার জন্য পরিচালিত করা যায়। শিক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে এগুলো বিএড ও এম এড পর্যায়ে সিলেবাসভুক্ত করে প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হোক।সাত. দলীয় অপরাজনীতির ছায়া থেকে ছাত্র রাজনীতিকে মুক্ত রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।আট. প্রশিক্ষিত ও শিক্ষিত বেকার যুবকদের যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। শিক্ষাক্রমে সত্যিকারের উদ্যোক্তা তৈরীর ছাপ থাকা উচিৎ। জাতীর সামষ্টিক কল্যান শিক্ষাক্রমের অন্যতম লক্ষ্য হতে হবে।নয়. কারিগরী শিক্ষার স্বাতন্ত্রতা বজায় রেখে, মৌলিক বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরো প্রসারিত করতে হবে। একই ভাবে ধর্মীয় বিশেষায়িত শিক্ষা অবারিত রাখতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে শক্তিশালী করা।দশ. জ্ঞানের স্থানান্তর অবশ্যই শিক্ষাক্রম ও সিলেবাস দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে।খেলাফত মজলিস সৎ ও দক্ষ মানুষ গড়তে চায় যেখানে ঈমান নির্ভর জীবনের হাতছানি আছে। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের নিজস্ব একটি অঙ্গিকার আছে। সে আলোকে আমরা শিক্ষাক্রম তৈরী করতে চাই।আমাদের সন্তানদের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যাশা করছি। আল্লাহ আমাদের ভালো কর্মপ্রচেষ্টাগুলো কবুল করুন। আমিন।
তথ্যসূত্র ১.
১. Zastoupil, L. and Moir, M. (eds.) The Great Indian Education Debate: Documents Relating to the Orientalist-Anglicist Controversy, 1781–1843. Richmond, 1999.
.২. উনিশ শতকের বাংলার শিক্ষায় বৃটিশ উদ্যোগ: ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, ড. শোয়াইব জিবরান।
৩. যুগে যুগে শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষার উত্তরণ, মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী, জাগরণী প্রকাশনী, ঢাকা।
৪. Proceedings of the Pakistan Education Conference held at Karachi from 27 November to 1st December 1947, Education Division, Government of Pakistan.
৫. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে শিক্ষা পরিকল্পনা ও বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ, স্কুল অব এডুকেশন।
৬. বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
৭. পূর্ব পাকিস্তানের প্রাথমিক শিক্ষা ১৯৪৭-‘৭১: সরকারের ভ‚মিকা, ড. মোছা. খোদেজা খাতুন
৮. History of Abduction in India, Tripura University.
৯. বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট১০. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, পর্যালোচনা মন্তব্য ও পরামর্শ, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক পরিষদ, ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর ২০১০।
১১. প্রথম আলো, ৩০ মে ২০২২১২. ইনকিলাব, ১১ জুন ২০২২
১২. নয়া দিগন্ত ২০ জুন ২০২২
১৩. বাংলাদেশের শিক্ষা কমিশন সমূহ – হোসাইন আহমদ
১৪. জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল