শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

গাজায় ভয়াবহ প্রত্যাঘাত, এক দিনে সর্বোচ্চ সৈন্য নিহত ইসরাইলের

গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ ইসরাইলি সৈন্য নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগেরি বলেন, মধ্য গাজায় এক ঘটনায় নিহত হয়েছে ২১ ইসরাইলি সৈন্য। আর আগের দিন তিনজন নিহত হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে ২৪ ঘণ্টায় এখন পর্যন্ত ২৪ ইসরাইলি সৈন্য নিহত হলো। এর ফলে ইসরাইলের ভাষ্যমতে, গাজায় স্থল হামলা শুরুর পর থেকে তাদের নিহত সৈন্যের সংখ্যা দাঁড়াল ২২১। হামাস অবশ্য দাবি করছে, আরো অনেক বেশি ইসরাইলি সৈন্য নিহত হয়েছে।

গত অক্টোবরের শেষ দিকে গাজায় স্থল হামলা শুরুর পর এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরাইলি সৈন্য নিহত হওয়ার ঘটনা। ইসরাইলি বাহিনী এখন খান ইউনিসে হামলা চালাচ্ছে। তারা মনে করছে যে গাজায় হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার এখানকার কোনো সুড়ঙ্গে অবস্থান করছেন। সিনওয়ারের বাড়ি খান ইউনিসেই।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী সবসময়ই বলে আসছে যে এই এলাকাটি অবিশ্বাস্য রকমের জটিল। এর এ পর্যন্ত লড়াইয়ে সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে।
হাগেরি বলেন, গাজার সীমান্ত থেকে প্রায় ৬০০ মিটার দূরে এই ঘটনাটি ঘটে। এ সময় ইসরাইলি সৈন্যরা বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস এবং হামাসের স্থান ধ্বংস করছিল। তারা সময় ইসরাইলের সীমান্ত সম্প্রদায়গুলোর অধিবাসীদের ফিরে আসার জন্য একটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছিল।

তিনি জানান, স্থানীয় সময় সোমবার ৪টার দিকে ‘সন্ত্রাসীরা’ গুলি করতে থাকলে ইসরাইলি সৈন্যরা ট্যাংকের গোলাবর্ষণের ছত্রছাড়ায় ছিল। এ সময় বিস্ফোরণে একইসাথে দুটি দোতলা বাড়ি ধসে পড়ে। ইসরাইলি সৈন্যরা বাড়ি দুটির ভেতর ও আশপাশে ছিল।

হাগেরি বলেন, খুব সম্ভবত ভবনগুলো ধ্বংস করার জন্য ইসরাইলি সৈন্যরা যেসব মাইন স্থাপন করেছিল, তাতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে বলে তিনি জানান।

৮ হাউছি টার্গেটে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের হামলা
ইয়েমেনে হাউছি যোদ্ধাদের ওপর আবার হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। সোমবার তারা হাউছিদের ভূগর্ভস্থ ভাণ্ডার অবস্থান এবং সেইসাথে ক্ষেপণাস্ত্র ও নজরদারি ব্যবস্থায় হামলা চালানো হয়। সর্বশেষ এই হামলায় আটটি স্থানকে টার্গেট করা হয়। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে টার্গেট করায় এই হামলা চালানো হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য জানিয়েছে।

গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধ করার দাবিতে হামাসের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে হাউছিরা লোহিত সাগরে ইসরাইলের সাথে সম্পর্কিত জাহাজে আক্রমণ চালানোর কথা জানায়। তারা অন্তত ৩০ বার বিভিন্ন জাহাজের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে। তাদের হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ওই রুটে জাহাজ চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।

হাউছিরা জানিয়েছে, ইসরাইল যখন গাজায় হামলা বন্ধ করবে, তখন তারাও জাহাজগুলোকে টার্গেট করা থামিয়ে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, সোমবারের হামলায় অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা ও নেদারল্যান্ড সমর্থন দিয়েছে।

এ যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাউছিদের আক্রমণের সক্ষমতা হ্রাসের জন্যই এসব স্থানে হামলা চালানো হয়েছে।

দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরাইলের
কাতার এবং মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে গাজা থেকে সকল বন্দীর মুক্তির অংশ হিসেবে হামাসকে দুই মাসের যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরাইল। মার্কিন সংবাদ সাইট ‘অ্যাক্সিওস’ সোমবার এক রিপোর্টে এ কথা জানিয়েছে।

ম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরাইলি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তিটি হবে একাধিক পর্যায়ে; যার মধ্যে প্রথমে নারী ও পুরুষদের মধ্যে যারা গুরুতর অসুস্থ তাদের ৬০-এর বেশি মুক্তি পাবে।

পরবর্তী পর্যায়গুলোতে নারী সৈন্যদের মুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হবে; এরপর কম বয়সী বেসামরিক পুরুষ, পুরুষ সৈন্য এবং মৃত বন্দীদের লাশ ফেরত আনা হবে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, চুক্তির অধীনে ইসরাইলে অনির্ধারিত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মধ্যে থেকে মুক্তি পাবে, তবে সকলে নয়।

প্রস্তাবটিতে যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত নয় তবে এতে গাজার প্রধান শহরগুলো থেকে ইসরাইলি সেনাদের উপস্থিতি কমিয়ে আনা হবে এবং ধীরে ধীরে বাসিন্দাদের ভূখণ্ডে বিধ্বস্ত উত্তরে ফিরে আসার অনুমতি দেয়া হবে।

ইসরাইলের ওয়েবসাইট ‘ই-নেট’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরাইলি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চুক্তিটি বাস্তবায়নে প্রায় দুই মাস সময় লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ওয়েবসাইটটি জানায়, সোমবার বন্দীদের পরিবারের সাথে একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন।

প্রস্তাবের খবর আসার পর মার্কিন গণমাধ্যম জানায়, নতুন বন্দীদের মুক্তি চুক্তি কার্যকর করার বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক হোয়াইট হাউসের সমন্বয়ক ব্রেট ম্যাকগার্ক মিশর ও কাতারের সঙ্গে বৈঠকের জন্য এই অঞ্চলে অবস্থান করছেন।

৭ অক্টোবর হামাসের রক্তক্ষয়ী হামলার সময় প্রায় ২৫০ জনকে বন্দীকে করা হয়েছিল। ইসরাইল বলছে, গাজায় এখনো প্রায় ১৩২ জন জিম্মি রয়েছে।
এএফপি জানায়, ইসরাইলি হিসেবে বন্দীদের মধ্যে সেখানে অন্তত ২৮ জন নিহত বন্দীর মরদেহ রয়েছে।
৭ অক্টোবরের হামলার জবাবে ইসরাইল নির্বিচারে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে গাজায় ২৫,২৯৫ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। এদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু।

সূত্র : আল জাজিরা ও টাইমস অব ইসরাইল/ নয়া দিগন্ত অনলাইন

আরো পড়ুন ...