শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে পরিচিত ও স্বীকৃত ক্রিয়াশীল দলগুলোকে নিবন্ধন না দিয়ে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সমস্ত আইন-কানুনকে ইসি ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করেছে ১০টি দল।
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১০ রাজনৈতিক দলের যৌথ উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), ডেমক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ সনাতন পার্টি, ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা মনে করি- নির্বাচন কমিশন রাজপথের আন্দোলন- সংগ্রামে পরিচিত ও স্বীকৃত ক্রিয়াশীল দলগুলোকে নিবন্ধন না দেয়ার মাধ্যমে তারা নিজেদের সাথে আত্মপ্রতারণা এবং নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সমস্ত আইন-কানুনকে ভঙ্গ করেছে। দেশবাসীকে আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার আহ্বান জানাই। যার যার জায়গা থেকে আপনারা এই সরকার ও তার ঘৃণ্য দালাল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। তাদের মুখোশ খুলে দিন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এবং যার যার দলীয় প্ল্যাটফরম থেকে এই অন্যায়, অন্যায্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলবো।আমরা হয়তো শিগগিরই সকল দলকে নিয়ে বসবো এবং পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবো।
তিনি বলেন, গত বছরের ২৬শে মে নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২ এর ১০ ‘এ’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৯৩টি রাজনৈতিক দল নির্ধারিত সময় আবেদন করেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। বিভিন্ন টেলিভিশন ও সংবাদ পত্রের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায় যে, নিবন্ধন প্রাপ্তির জন্য যে সকল শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে প্রতিপালন করতে পেরেছে মাত্র ৭ থেকে ৮টি দল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে আমরা দেখলাম নির্বাচন কমিশন সেই ৭ থেকে ৮টির মধ্য থেকে কিছুটা অদল বদল করে মোট ১২টি দল প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে বলে তালিকা প্রকাশ করে।
সেই ১২টি দলের দাখিলকৃত তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করার জন্য ইসি পরে সকল দলকে আলাদাভাবে চিঠি দেয়। ১২টি দলের নাম প্রকাশ করার পরেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সেই দলগুলো নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। সেসব রিপোর্টে দেখা যায় কোনো কোনো দলের অফিসের অস্তিত্ব নাই। নির্বাচন কমিশন গত ১ বছর ধরে যাচাই বাছাইয়ের নোটিস দিয়ে আবার কোথাও কোথাও আচমকা ভিজিট করে আমাদের দলগুলোর কেন্দ্রীয় অফিস, জেলা-উপজেলা অফিস পরিদর্শন করেছে।
পরিদর্শনের নামে তারা যেভাবে আমাদের তৃণমূলে অফিসের দলিল, সাইন বোর্ড, আমাদের দলীয় নেতা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাতে মনে হয়েছে তারা যেন রাজনৈতিক দল নয়। বরং আসামিদের তালিকা হাল-নাগাদ করছে।
মান্না বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি, একটি রাজনৈতিক দল কার্যকর কিনা তা বোঝা ও জানা যাবে সেই দলটির কার্যক্রম অনুধাবন করার মাধ্যমে। একটি দল ও তার নেতৃবৃন্দকে যদি মানুষ চেনে, সেই দলটি যদি জনমানুষের দাবি নিয়ে সমাজে ও রাজপথে সক্রিয় থাকে, জেলা, উপজেলা, গ্রামেগঞ্জে যদি সেই দলটির তৎপরতা থাকে তাহলে এর চাইতে বড় নিবন্ধনের বিবেচনা আর কী হতে পারে?
তিনি আরো বলেন, আপনারাই বলেন পত্রপত্রিকা, সংবাদ মাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনারা প্রতিদিন আমাদের কার্যক্রম ও ভূমিকা কি দেখছেন না? আপনারাই বলুন এই যে, এতগুলো সুপরিচিত, সক্রিয় এবং রাজপথে সংগ্রামরত রাজনৈতিক দল বাদ দিয়ে যাদের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে তাদের নাম আপনারা কয়জন শুনেছেন? তাদেরকে কি আপনারা চেনেন? তাদের কি আদৌ কোনো অফিস, নেতা-কর্মী আছে?
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, আমরা শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে নিবন্ধন আবেদন করেছিলাম। আমরা জানি, বাংলাদেশের এই নির্বাচন কমিশনের বিন্দুমাত্র নিরপেক্ষতা নাই। সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনে পরিণত হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করার জন্য এখানে নিয়োগ দেয়া হয়। ভবিষ্যতে আরো বড় পুরস্কারের লোভে তারা দস্যু-দালালের মতো ফ্যাসিস্টদের স্বার্থে যে কোনো বা সকল বেআইনি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে। আপন হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মতলববাজ এমন গণবিরোধী সরকারি কর্মকর্তারা দেশে জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার টিকিয়ে রাখতে বেহায়া ও নির্লজ্জ আচরণ করেন।
বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল একটি সরকার গঠন করতে না পারা এর অন্যতম কারণ। নীতিহীন দলবাজদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার ফলে, ক্ষমতায় জেকে বসেছে গুম-খুনে পারদর্শী এই অবৈধ সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, গণঅধিকার পরিষদের (ড. রেজা কিবরিয়া) যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএলডিপি’র চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, বিপিপি চেয়ারম্যান বাবুল সর্দার চাখারী, ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি আশিক বিল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।