শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

মেয়র তাপসের বক্তব্য আপিল বিভাগের নজরে আনলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম

‘একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম’—ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের দেওয়া এমন বক্তব্য আপিল বিভাগের নজরে এনেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগে আজ বুধবার সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার (২৩ মে) একটি দৈনিকে মেয়র তাপসের ওই বক্তব্য প্রকাশিত হয়। আজ ওই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে অংশবিশেষ পড়ে শোনান ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা একটু দেখি। পড়ে দেখি।’

‘দুর্ভাগ্যজনক’

আজ বেলা সোয়া ১১টা থেকে আপিল বিভাগে জড়ো হতে থাকেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতে উপস্থিত হন ব্যারিস্টার আমীর। ১১টা ৩৫ মিনিটে এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অপর দুই বিচারপতি। বিচারপতিদের আসন গ্রহণের পর প্রতিবেদন তুলে ধরেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘সংক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের জনগণ বিচার বিভাগের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়র বলেছেন একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম, মানবজমিনে এসেছে। গর্ব করে, যা দুর্ভাগ্যজনক।’

প্রতিবেদনের অংশবিশেষ তুলে ধরে আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘ওরে বাবা, কী জানি ফেরেশতা আসছে।…মনটা চায় আবার ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসি। যেখানে মুগুর দেওয়ার সেটিও জানি। একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম। গত নির্বাচনের সাব-কমিটির আহ্বায়ক মশিউজ্জামানকে মনে করতাম ওরে বাবা, কী জানি ফেরেশতা আসছে। সবচেয়ে বড় চোর হলো মশিউজ্জামান। যেসব সুশীল আমাদের বুদ্ধি দিতে যাবেন, সেসব সুশীলকে আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেব।’
গত রোববার বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এমন মন্তব্য করেন বলে উল্লেখ করেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ে শোনান আমীর-উল ইসলাম। তিনি বলেন, ব্যারিস্টার তাপস তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ গঠনের আগেও অনেক বড় বড় আইনজীবী নেতা ছিলেন। কিন্তু যখন এই সংগঠন গঠন করা হয় তখন কিন্তু এইসব বিজ্ঞ, খ্যাতনামা, প্রাজ্ঞ, বড় বড় নেতাদের বাদ দিয়ে আমাদের মতো ছোট আইনজীবীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ গঠন করা হয়। সুতরাং এগুলো ভুললে চলবে না। সবাই খালি ইতিহাস ভুলে যায়। ইতিহাস ভুললে চলবে না।’

এ সময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা একটু দেখি। এখন কোর্টের কাজ করি।’

আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘ফুল কোর্টে আসবে?’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা পড়ি, পড়ে দেখি। কী করতে হবে না হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে না?’

এ সময় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী কায়সার কামাল, সমিতির সাবেক সম্পাদক এম বদরুদ্দোজা, মো. রুহুল কুদ্দুসসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারা এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকিরও উপস্থিত ছিলেন।

পরে আদালত থেকে বেরিয়ে এক ব্রিফিংয়ে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘এটি বড় রকমের অবক্ষয়। এ জন্য আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে গিয়েছিলাম। আদালত বলেছেন, তাঁরা দেখবেন। আমরা প্রত্যাশা করছি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এটি দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এই বক্তব্যে বিচার বিভাগ শুধু নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ মন ক্ষুণ্ন হয়েছে। সারা দেশের মানুষ বিচারব্যবস্থার দিকে তাকিয়ে থাকে। বিচারকদের কথা শুনলে গ্রামের একজন চাষিও মনে করেন, সেখানে ন্যায়বিচার পাব।’

হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে ব্রিফিংয়ে আমীর-উল ইসলাম আরও বলেন, ‘মেয়র তাপস সুশীল সমাজ সম্পর্কেও কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। বারের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়েও কটাক্ষ করেছেন। বিচার বিভাগকে হেয় করেছেন। এই অধিকার তিনি কোথায় পেয়েছেন? এটা অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ। তাঁর এ বক্তব্য আদালত অবমাননা।’ প্রথম আলো

আরো পড়ুন ...